সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের নতুন তারকা বিবেচিত ডা. দীপু মনি চলতি বছর বিবার্তা সম্মাননা পাচ্ছেন। বিবার্তা পরিবার তাঁকে ‘রাজনীতি’ ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগ পান। ১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
বর্তমানে ডা. দীপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। দশম জাতীয় সংসদে তিনি চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর- হাইমচর) এর প্রতিনিধিত্ব করছেন। সামাজিক উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে তিনি পুনরায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দীপু মনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াদুদের কন্যা। এম এ ওয়াদুদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। দীপু মনি হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি পড়েন।
এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসনের ওপর কোর্স করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে দীপু মনি কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা জয় করে। এতে করে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়।
দীপু মনির স্বামী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট তৌফীক নাওয়াজ। আন্তর্জাতিক একটি ল’ফার্মের প্রধান। তিনি উপমহাদেশের দু’ হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত ধ্রুপদী সঙ্গীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’ এর একজন শিল্পী। তাঁদের রয়েছে দু’সন্তান। ছেলে তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাবলী নাওয়াজ।
পররাষ্ট্রন্ত্রী হিসেবে যোগদানের আগ পর্যন্ত ডা. দীপু মনি মানবাধিকার, নারী অধিকার, স্বাস্থ্য আইন, স্বাস্থ্যনীতি ও ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য অর্থায়ন, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং পররাষ্ট্রনীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কাজ করছিলেন।
দীপু মনি একাধারে লেখালেখি, শিক্ষকতা, পরামর্শদাতা, গবেষণা, অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি পরিচালনা করেন এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদল নিয়ে গঠিত ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের মাধ্যমে দুঃস্থ ও স্বাস্থ্যসুবিধা বঞ্চিত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কাজ করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আইন প্রণয়নে জনমত গড়ে তোলার কাজেও নিয়োজিত।
প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি ও রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণের তিনি একজন একনিষ্ঠ প্রবক্তা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের ঘনিষ্ঠ সহায়তায় তিনি আওয়ামী লীগের নারী কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি পাস করা ডাক্তার হয়েও পেশা বদল করে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারীদের দেখতে আমরা এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, দায়িত্ব সকলের কাছেই সমান। দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ সবার বেলায়ই রয়েছে। তাই এখন দিন বদলের সময়ে নারীপুরুষ হিসেবে নয়, যোগ্যতা ও মেধা দায়িত্ব পালনের প্রধান মাপকাঠি হওয়া উচিত’।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পাঁচ বছর আর ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী দুই বছর এই টানা সাত বছর ধরে মুখ থুবড়ে থাকা পররাষ্ট্রনীতিকে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ওই অর্ধযুগের বেশি সময়ে বিশ্ব দরবারে জঙ্গিবাদের চারণভূমি, ব্যাপক দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনায় বাংলাদেশ ইমেজ সংকটে ভুগছিল। একদিকে জোট সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি শুধু ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ ভারতই না, বরং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে বাংলাদেশকে এক বন্ধুহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।
দীপু মনির মন্ত্রীত্বকালেই প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সীমানা চিহ্নিত করা, সীমান্ত ম্যাপ স্বাক্ষর, তিনবিঘা করিডর সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, ঢাকায় বিমসটেকের সচিবালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনীকে ফিরিয়ে আনতে আইনজীবী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, নতুন কূটনৈতিক মিশন খোলাসহ বিভিন্ন বিষয় কূটনৈতিক অগ্রগতি বা অর্জন মহাজোট সরকারের ঝুলিতে এসেছে।
তাঁর সময়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ভুলফ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ও ক্ষমতাধর নেতৃত্ব। এসব হাই প্রোফাইল সফর দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির সাফল্যকেই নির্দেশ করে। (সূত্র-বিবার্তা২৪ডটনেট)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়১১:৫৫ পি.এম, ২৮ এপ্রিল ২০১৭,শুক্রবার
ই.জু