জাতীয়

ডামাডােলের আড়ালে জাতীয় নানা ইস্যু গুরুত্ব পাচ্ছে না

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে চরমপন্থী গোষ্ঠীর একাধিক বিক্ষিপ্ত হামলার কারণে চাপা পড়ে যাচ্ছে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। বিশেষত পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচনী প্রচারণা নিয়েই ব্যস্ত। ফলে চাপা পড়ে গেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হ্রাস, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানী তেলের মূল্য হ্রাস, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রতিহতকরণ, বাসভাড়া-বাড়িভাড়া কমানো, যানজট এসব ইস্যুতে গড়ে ওঠা আন্দোলন।

অথচ গত নভেম্বরেও বাসভাড়া ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণ-শুনানী হয়েছে। অক্টোবরে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে রোডমার্চ করেছে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বামমোর্চা। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সরকারি জোটের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচী থেকে হারিয়ে গেছে এসব ইস্যু।

সাধারণভাবে পৌর নির্বাচনে স্থানীয় ইস্যুগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তারপরও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সামনে নিয়ে আসা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অন্দোলন গড়ে তোলার অন্যতম সংগঠক ও সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, নির্বাচনের সময় এসব ইস্যু আলোচনায় আসে না। তবে ইস্যুগুলো কিন্তু হারিয়ে যায় না। আমাদের দুর্বলতার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সাময়িক চাপা পড়ে যায়। তবে বড় দু’টি দল এবং মিডিয়াগুলোও এই ইস্যুগুলো গোপন রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

তিনি বলেন, ‘তবে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আশা করি নির্বাচনের পর ইস্যুগুলো আবার সামনে আনা হবে।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘আসলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন তো আমরা করেছি। কোন ইস্যুই হারিয়ে যায়নি। কোন সময় এই আন্দোলনের গতি বেশি, কোন সময় কম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলন মানে শুধু মিছিল-মিটিং বা ধর্মঘট নয়। আন্দোলন মানে জনমত গঠন। রামপালসহ বিভিন্ন জনগূরুত্বপূর্ণ দাবিতে সামনে জাতীয় কমিটির লংমার্চ, আমন ধানের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং গার্মেন্টস ও চা শ্রমিকদের পে-স্কেলের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ইস্যুগুলো শাসক ও বুর্জোয়া দলগুলোর কাছে হারিয়ে যায়। কিন্তু ভোট আসলে আমরা ইস্যুগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরি।’

গণতান্ত্রিক বামমোর্চার নেতা ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা তো ইস্যুগুলো নিয়ে সবসময় আন্দোলন করেছি। আমরা আমাদের শক্তি সামর্থ্য দিয়ে আন্দোলনে আছি। ১২ মাস তো একই ধরনের আন্দোলন হয় না। আন্দোলনেরও তো ওঠতি-পড়তি আছে। বিশেষ সময়ে কিছু ইস্যু ফোকাস হয়। বামমোর্চা জনগণের প্রত্যেক উদ্বেগ নিয়ে রাজপথে আছে।’

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করি না। আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করি। আমাদের কাছে এই ইস্যুগুলো কখনো হারিয়ে যায় না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষগুলো নির্বাচন প্রিয়। তারা ভোটের সময় ভোট দিতে চায়। তখন অন্য আন্দোলনগুলো জনগণের কাছে ম্রিয়মান হয়ে যায়। এই সুযোগগুলো সব সরকারই নিতে চায়। যার কারণে শীতকাল আসলেই নির্বাচন আবহ সৃষ্টি করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন, বাড়িভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলন এখন চোখে পড়ছে না। এগুলো বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা। রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ইস্যুকে নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত করা উচিৎ।’

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৯:৩৪ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

এমআরআর  

 

Share