চাঁদপুরে ডাকাতিয়া পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গাতে মার্কেটের ভবন নির্মাণ

চাঁদপুর শহরের ঢালীর ঘাট এলাকায় ডাকাতিয়ার পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে মার্কেটের বিশাল ভবন নির্মান করা হচ্ছে। নদীর পাড়ে থাকা সরকারি ওই জমি নিজের মালিকানা দাবি করে পাকা ভবন নির্মাণ করে চলেছেন স্থানীয় এলাকার মের্সাস সেলিম এন্ড ব্রাদাস সেলিম ডগ ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী মোঃ সেলিম বেপারী। এতে যেনো কারোরই কোন মাথা ব্যথা নেই। তাইতো ডগ ইয়ার্ডে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, সেপটি বিহিন বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ করা এবং নদীর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখলসহ নানা অনিয়ম করে চলেছেন স্থানীয় এলাকার সেলিম বেপারী নামের ওই ব্যক্তি। এ নিয়ে এলাকাবাসিও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

চাঁদপুর শহরের ঢালীর ঘাট (গুদারাঘাট) এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডাকাতিয়ার পাড়ে থাকা ঢালীরঘাট গুদারার সাথেই ব্যাপক পরিসরে একটি মার্কেটের ভবন নির্মান কাজ প্রায় শেষের দিকে। ভবনের পাশেই রয়েছে সেলিম ডগ ইয়ার্ড নামের বড় একটি নৌযান মেরামত প্রতিষ্ঠান। যেখানে বিভিন্ন, পল্টুন, ট্রলার, বাল্কগেডসহ বিভিন্ন নৌযান মেরামত করা হয়।

খবর নিয়ে জানা গেছে, সেলিম ডগ ইয়ার্ডের পাশে থাকা ডাকাতিয়ার তীরে গুদারাঘাট সংলগ্ন যে মার্কেটের ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি নির্মাণ করছেন ডগ ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী সেলিম বেপারী। তবে এতে কোন প্রকার অনুমতি বা সরকারি ভাবে কোন লিজ নেয়া নেই। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের লিজকৃত জমিতেও এভাবে ফাউন্ডেশন নিয়ে ভবন নির্মাণেরও কোন বৈধতাও নেই বলে জানা গেছে। সেলিম বেপারী এমন অনিয়মের কারনে দীর্ঘদিন পূর্বে চাঁদপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তার একটি অবৈধ বাউন্ডারিও ভেঙ্গে ফেলে।

ডগ ইয়ার্ডে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, সেফটিবিহিন কাজে ঘটছে মৃত্যুসহ নানা দুর্ঘটনা

স্থানীয় এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলাপকালে জানা যায়, মো. সেলিম বেপারী দীর্ঘদিন ধরে ঢালীর ঘাট এলাকায় তার ডগ ইয়ার্ডে খুঁটি থেকে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ওয়ারলিংয়ের কাজ করে থাকেন। এছাড়াও তার ডগ ইয়ার্ডে ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ করার সময় কোন প্রকার সেফটির ব্যবস্থা করা হয়নি। আর এমন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে প্রায়ই ওই ডগ ইয়ার্ডে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

গত ১৫ মে বল্কহেডের ওয়ালিংয়ের কাজ করতে গিয়ে রাজন (৩০) নামের এক ওর্য়ালিং শ্রমিকেরর করুন মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় মিল্লাত হোসেন (২৮) নামের আরেক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া এক দেড় বছর পূর্বেও আরেকজন শ্রমিকের একই ভাবে মৃত্যুবরণ করেন বলে জানান স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডগ ইয়ার্ডের সেলিম বেপারীর কাছে জানতে গেলে তিনি সংবাদকর্মীদের সাথে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি ওই জমিকে নিজের ক্রয়কৃত মালিকানা জমি দাবি করে করে বলেন, আমি আমার ক্রয়কৃত নিজের জমিতে ভবন নির্মাণ করেছি। এটা নিয়ে অনেক মামলা মোকাদ্দমা হয়েছে, তারপর আমি রায় পেয়েছি। যার কাছে ক্রয় করেছি সে এখন নেই। এমন কথার প্রসঙ্গে তিনি একসময় খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে স্থানীয়দের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বলেন, আরো তো অনেকে অনেক কিছু করে আমার সাথে কেনো এতো…..।

তার ডগ ইয়ার্ডে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কে বলেছে আমি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ডগ ইয়ার্ড চালাই। এমন কোন প্রমাণ নেই।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন চাঁদপুর নদী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমরা নদীর দুই পাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রনয়ন করছি। সে তালিকা অনুযায়ী উচ্ছেদের জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহন করেছি। চাঁদপুরে ডগ ইয়ার্ডের জন্য যেসব লাইন্সেস দেয়া হয়ে থাকে, অবশ্বই তাদেরকে কিছু সত্য মেনে চলতে হয়। কেউ যদি সে সত্য মেনে না চলে তাহলে আমরা তার সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো। তিনি বলেন, ডাকাতিয়া নদীর উভয় পাড়ে যদি কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মান করা হয়ে থাকে তাহলে আমরা সে বিষয়েও তালিকা প্রনয়ন করে ব্যবস্থা নিবো।’

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ১ জুন ২০২৩

Share