সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা-চাঁদপুর নৌরুটে চলবে লঞ্চ এবং চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রেলপথে চলবে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩১ মে রোববারথেকে সীমিত পরিসরে চলবে অন্তত ৮টি লঞ্চ এবং একটি ট্রেন। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন বলে জানা গেছে।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঢাকা-চাঁদপুর রুটে আপাতত ৮টি লঞ্চ চলাচল করবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিলে ভাড়া বেশি নিতে হবে।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামীকাল ৩১ মে থেকে চলবে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রেলপথে চলবে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন। এ ক্ষেত্রে স্বল্প যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে ট্রেনটি। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, প্রাথমিক অবস্থায় সোনারতরি কোম্পানির ২টি, জমজম কোম্পানির ১টি, হাইস্পিড কোম্পানির ২টি, এমভি রাসেল লঞ্চসহ কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করবে।
এ বিষয়ে রফরফ লঞ্চের মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হলে যে লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ৫০০ সেই লঞ্চ নিতে পারবে মাত্র ২শ যাত্রী। এক্ষেত্রে তাদের লঞ্চগুলোর ফুয়েল কস্ট আছে। ভাড়া না বাড়ালো তাদের পোষাবে না।
তিনি বলেন, ভাড়া না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন যাদের পোষাবে তারা লঞ্চ চালাবে আর যাদের পোষাবে না তারা স্টাফ সংকটে লঞ্চ বন্ধ রাখবে।
এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ও আছে। যারা সরাসরি পাবলিকের সাথে ডিলিংস করবে তাদের সেফটির বিষয় আছে। তাদেরকে পিপিই পড়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, চলবে সীমিত আকারে। চাঁদপুর রুটে প্রায় ১০টি লঞ্চ চলাচল করবে। এর মধ্যে রয়েছে সোনারতরি কোম্পানির ৬টি লঞ্চের মধ্যে ২টি, জমজম কোম্পানির ১টি, হাইস্পিড কোম্পানির ২টি, রাসেল ১টি। এছাড়া রফ রফ কোম্পানির ৩টি লঞ্চের মধ্যে ১টি চলতে পারে। আর চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে আপাতত ৬টি লঞ্চ চলবে।
তিনি বলেন, চাঁদপুর থেকে ঢাকা যেতে সাধারণ ডেকে ভাড়া আগে ছিল ১০০ টাকা। এখন হয়তো ভাড়া নিতে হবে দেড়শ’ টাকা। তা না হলে আমাদের পোষাবে না।
সোনারতরী লঞ্চের সুপার ভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-চাদপুর রুটে ২৪টি লঞ্চ আছে। সবাই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। লঞ্চ চালাতে সবাই আগ্রহী। তারা যার যার টাইম-সিডিউল অনুযায়ী চলবে। যাত্রী বেশি হলেতো লঞ্চ বেশি ছাড়তেই হবে। আমাদের ৩টি লঞ্চ রেডি আছে। বাকীটা মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে লঞ্চে তিনফুট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন হবে। করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকেই আমরা কিছুটা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলে আমাদের প্রস্তুতি আছে। লঞ্চগুলোও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নও করা আছে।’
তিনি বলেন, আমরা আপাতত নির্ধারিত ভাড়াতেই চঞ্চ চালাবো। দু’ চারদিন ভাড়ার বিষয়টি অবজারবেশনে থাকবে। নির্ধারিত ভাড়ায় লোকসান হলেতো আর লঞ্চ চালানো সম্ভব হবে না।
এর আগে ২৯ মে শুক্রবার খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের আদেশেই গণপরিবহনের অংশ হিসেবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। যেহেতু ২৮ মে সরকারি আদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আগামি ৩১ মে থেকে লঞ্চ চলবে। তবে শর্ত পরিপালনের বিষয়সহ নানাদিক দিয়ে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বিআইডবিøউটিএ চেয়ারম্যান।’ এই সময়ে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরকারের কোনও আদেশ অমান্য করতে পারবো না। তাই আগামী ৩১ মে রবিবার থেকে লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানাতে পারবো, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান আমি নিজেই। কারণ, ফেরিতে চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাধারণ মানুষের ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালালে ধারণ ক্ষমতার পাঁচ ভাগের একভাগ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে রওনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি তো প্রাসঙ্গিক। তাই এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাতে লঞ্চ চালাতে পারি, সেক্ষেত্রে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সহযোগিতা লাগবে। কোনোভাবেই আমাদের লঞ্চের স্টাফদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারবো না।’
তারা সুস্থ না থাকলে আমাদের আম-ছালা দুটোই যাবে বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি। আরো পড়ুন- লঞ্চে যাতায়াতে যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ৩০ মে ২০২০