‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম,বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম,বন্ধুরে তোর লাগি পরবাসী হইলাম।’- শিল্পীর সেই গানের সুরের মতোই ক্রমান্বয়ে টেলিফোন হারিয়ে যেতে বসেছে। চাঁদপুর জেলা জুড়ে ১ হাজার ৮শ ৭৫টি গ্রাহক সেবা নতুনত্ব আনতে উদ্যোগ গ্রহন করেছে বিটিসিএল,চাঁদপুর ।
তা পুনরুদ্ধারে বিটিসিএল নতুন একটি প্রকল্পোর আওতায় চাঁদপুর সদর ও হাজীগঞ্জ ব্যতীত বাকি ৬ টি উপজেলায় এজিডব্লিউ একচেঞ্জ এর মাধ্যমে এমওটিএন প্রজেক্টের আওতায় গ্রাহক সেবায় নতুন ধারায় ফিরতে শুরু করেছে।
এমনটি জানালেন চাঁদপুর টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএল’র সহকারী ব্যবস্থাপক এ এফ এম মুজিবুর রহমান ৩০ নভেম্বর দুপুরে চাঁদপুর টাইমসকে এ তথ্য জানান।
তিনি আরো বলেন,‘জেলার ৬টি উপজেলা কচুয়া,মতলব উত্তর ও দক্ষিণ,ফরিদগঞ্জ,হাইমচর ও শাহারাস্তিতে ইতোমধ্যেই আধুনিক সেবা দিতে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব ডিজিটাল টেলিফোনের নাম্বারও পরিবর্তন হয়েছে। গ্রাহকগণ এখন থেকে ইন্টারনেট সুবিধা ও দ্রুতগতির সেবা পাবে।’
চাঁদপুর জেলা টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলোর তখন গ্রাহক ক্যাপাসিটি ছিলো চাঁদপুরের ৪,৪০০ টি যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০২ সালে। হাজীগঞ্জেরটি ১০০০ টি। যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০৬ সালে।
শাহারাস্তিটি ৯০০টি। যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০৩ সালে। কচুয়ারটি ৩০০ টি যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০১ সালে। মতলব দক্ষিণে ৯০০ যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০৩ সালে। মতলব উত্তরে ৫০০ যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০৯ সালে। ফরিদগঞ্জে ৫০০ যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০৬ সালে এবং হাইমচরে ৫০০ যা বিটিসিএলে রূপান্তর হয় ২০০৭ সালে।
শুধু তাই নয়-চাহিদার চাপে কচুয়ার রহিমা নগর,সাচার ও চাঁদপুরের পুরাণবাজার একচেঞ্জ স্টেশনগুলো বাড়ানো হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বর্তমানে চাঁদপুর জেলার একচেঞ্জগুলোর গ্রাহক সংখ্যা দিন দিনই কমছে। ফলে ওইসবও বন্ধ হয়ে আছে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএল চাঁদপুরের দেয়া এক তথ্যে জানা গেছে ,২০২১ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা শহর ও উপজেলা একচেঞ্জগুলোর বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ১ হাজার ৮শ’ ৭৫ জন। এর মধ্যে চাঁদপুরের ১ হাজার ৩ শ’ ৯২,হাজীগঞ্জে ১ শ’ ৮, শাহারাস্তিতে ৭১, কচুয়ায় ১শ’৯,মতলব উত্তরে ৩৫,মতলব দক্ষিণে ৭৮,ফরিদগঞ্জে ৫৯ এবং হাইমচরে ৩৬ জন বর্তমানে টেলিফোন গ্রাহক রয়েছে ।
যার অধিকাংশই সরকারি অফিস আদালত। আগের মতো এখন কোনো উচ্চবিত্তই বাসায় টেলিফোন রাখেন না । তবে সরকারি কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরকারি নির্দেশনা মানতে গিয়ে বাসায় টেলিফোন রাখেন বলে জানা যায় ।
প্রসঙ্গত,সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএল’র দুর্দিন কাটাতে এ সেবা নিশ্চিত হচ্ছে।দিন দিনই কমছে চাঁদপুরে বিটিসিএল টেলিফোনের ব্যবহার ও গ্রাহক সংখ্যা।চাঁদপুরে এখন ১ হাজার ৮শ ৭৫ জন গ্রাহক রয়েছে।
অথচ ২০১৬ সালে বিটিসিএল সূত্রে এক প্রতিবেদনে এর সংখ্যা প্রকাশ হয়েছিলো ২ হাজার ৩ শ’১৯ জন। বর্তমানে রয়েছে ১-৮৭৫ জন গ্রাহক।এদের অধিকাংশই বর্তমানে সরকারি অফিস-আদালতে ।
এক সময় যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা বাসা বাড়িতে একটি টেলিফোনের সংযোগ নিতে অনেক কাঠখড়ি পোড়ানোর পর পাওয়া যেতো এমন কথা প্রবাদ বাক্যের মত শোনা যেতো। বর্তমানে আবেদন করলেই সংযোগ পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের বিটিসিএল কর্মকর্তারা। তারপরেও গ্রাহক বাড়ছে না উল্টো কমে যাচ্ছে। এ সবই সময়ের ব্যবধানের আধুনিক প্রযুক্তিগত দান।
১৯৮৪ সালে চাঁদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলা সদরে একটি করে টেলিফোন একচেঞ্জ স্থাপিত হওয়ার পর এর গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন দেশের সকল টেলিফোন ব্যবস্থা এনালক পদ্ধতিতে চলে আসছিল ।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএলের পদ্ধতি পরিবর্তন করে আনে ডিজিটাল পদ্ধতি। এতে চাঁদপুরের কোনো কোনো একচেঞ্জে ‘অপটিকেল ফাইভার’ সংযোগ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল-বিটিসিএল এর গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি ও আধুনিক সেবায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো। তখন চাঁদপুরের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড (বিটিসিএল) চাঁদপুর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে,২০১৬ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ২৭৫ জন গ্রাহক কমে গেছে বা বিকল হয়ে আছে অথবা ব্যবহার জনিত কারণে বন্ধ আছে ।
বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বিশ্বায়নের তাগিদে মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে টেলিফোন ব্যবস্থা ডিজিটাল হলেও এর ব্যবহার কমতে শুরু করে। এরপর কম্পিউটার ইন্টারনেট,ফেসবুক, ইমো,স্কাইপি ও ই-মেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলায় টেলিফোন ব্যবহারে নেতিবাচক প্রভাবপড়ছে।
মানুষের মধ্যেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মন-মানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। অন্যদিকে টেলিফেন ব্যবহারের চেয়ে মোবাইলের ব্যবহার সহজলভ্য বিধায় মানুষকে আরো আকৃষ্ট করেছে। যার ফলেই বিটিসিএল’র দুর্দিন দেখা দিয়েছে ও গ্রাহক কমছে ।
এদিকে পুরাণবাজার,কচুয়ার সাচার ও রহিমানগর টেলিফোন একচেঞ্জগুলো গ্রাহক সঞ্চালন না থাকায় কর্তৃপক্ষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠ ঐ কর্মকর্তা জানান।
বাংলাদেশ টিলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএল সূত্র মতে ‘উন্নত প্রযুক্তির ফলে মানুষের মধ্যে টেলিফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। তাই টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ বেশ ক’টি পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করলে গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
একজন ব্যক্তি ব্যবসায়ী হলে ট্রেডলাইসেন্সের কপি, আইডির কপি,৪ কপি ছবি ও ৬শ’৪৫ টাকার ডিমান্ড নোট ও জামানত সহ আবেদন করলেই একজন গ্রাহক টেলিফোন পেতে পারেন। কল রেটও তুলনামূলক অনেক কম।’
সারাদেশ ব্যাপি টিএন্ডটি-টু– টিএন্ডটি প্রতি কল ১০ পয়সা ও পিক আওয়ারে ৩০ পয়সা এবং অন্যান্য অপারেটরে ৮০ পয়সা প্রতি মিনিটে চার্জ প্রযোজ্য ।
আবদুল গনি,৪ ডিসেম্বর ২০২১