Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / টুং-টাং শব্দে মুখরিত মতলব উত্তরের কামারপাড়া
কামারপাড়া

টুং-টাং শব্দে মুখরিত মতলব উত্তরের কামারপাড়া

দিনরাত লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারপাড়া। আর মাত্র একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের কামারপাড়ার কারিগররা। বছরের অন্য সময় গুলোতে কাজের তেমন চাপ না থাকলেও কোরবানির সময় যেন দম ফেলার ফুরসৎ নেই তাদের। তবে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারে সরঞ্জামের দাম বেশি হওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছেন কামাররা। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানান অনেকে। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প।
আজ শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে উপজেলার ছেংগারচর বাজার কামারপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে ঘিরে দা, বটি, চাকু, দাসা, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরিতে ব্যস্ত কামার শিল্পীরা। এখন দম ফেলারও সময় নেইএ কারিগরদের। স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বঁটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন তারা।

বর্তমানে আকৃতিভেদে ছুরি ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, দা ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, হাড় কোপানো চাপাতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। তবে আকৃতিভেদে দাম কম বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পুরোনো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবণ-পানি দিতে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়ে থাকে। আধুনিক অনেক সরঞ্জাম বাজারে আসাতে দেশীয় জিনিসের ক্রেতা আগের থেকে অনেক কমে গেছে।

প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরি বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রীর মূল্য কমে যাওয়া, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে স্টিল সামগ্রৗ আমদানিসহ চরম আর্থিক সংকট ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে এ উপজেলার কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রামে এখনও প্রায় দেড় শতাধিক কামার পরিবার কষ্ট করেই তাদের বাপ-দাদার পৈত্রিক এ পেশা ধরে রেখেছে। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানির ঈদ আসলেই তারা বাড়তি আয়ের সুযোগ পান। কিন্তু কয়লা ও লোহার দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন না তারা।

কামার শিল্পী স্বপন বিপ্লব কর্মকার ও সুমন কর্মকার বলেন, বংশ পরস্পরায় আমরা এই কাজ করে আসছি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করতেন। আগে দেখতাম সারা বছর বাপ- দাদারা এই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু এখন সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদ আসলে আমাদের কাজের চাহিদা একটু বেড়ে যায়।

বিপ্লব কর্মকার আরও জানান, এ শিল্পের মূল উপাদান হলো কয়লা, কিন্তু কয়লা সংকট এ শিল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় নতুন করে কেউ এই পেশার সাথে জড়িত হতে চাচ্ছে না। তবে বছরের অন্যান্য সময় আমাদের কাজ না থাকলেও ঈদুল আজহায় বিক্রি ভালো হয়। গত কয়েকদিন যাবত কাজের চাপ কিছুটা বেড়েছে।

তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, অন্য বছরের কোরবানির ঈদের চেয়ে এবার বিক্রি ও সান দেয়ার কাজ কম। এদিকে বেড়েছে কয়লা-লোহার দাম। সাথে বিক্রিতেও মন্দাভাব। তবুও, শেষ মুহূর্তে চেষ্টার কমতি নেই। আশা করছি দা-বটি-ছুড়ি বেঁচে কিছু পয়সা আসবে।

কোরবানির ঈদকে সামনে পশু জবাই করার কাজে ব্যবহার করতে চাপাতি, ছুরি, ছেনা কিনতে আসা ক্রেতা আরমান কাজী জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে দ্যা,ছুরি, চাপাতি প্রয়োজন পড়ে। এ বছরও কোরবানি পশু জবাই করার জন্য চাপাতি ও ছুরি নিতে আসছি আর পুরাতন দ্যা,বটি সান দিতে এসেছি। দাম একটু বেশি হাকাচ্ছেন তারা তবুও কিছু করার নেই লাগবে যেহেতু তাই নিতে হলো।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ১৫ জুন ২০২৪