করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য রাজধানীতে কেন্দ্র আছে ৪৭টি। এরমধ্যে ২৩টি কেন্দ্রে আজ মঙ্গলবার (৮ জুন) কোনও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো ভ্যাকসিন সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। তাছাড়া আজ ঢাকায় ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৭১৬ জন। সারাদেশ মিলিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫ হাজার ৫৬৩ জন। এখন পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে। সেই হিসাবে এই মুহূর্তে মজুত আছে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৪ ডোজ ভ্যাকসিন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর জাতীয় সংসদ সচিবালয় ক্লিনিক, মোহাম্মদপুর ফারটিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার ও ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, আজিমপুরের মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, মাতুয়াইলের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতাল, শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল, জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউট, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, নগর মাতৃসদন গোলাপবাগ ও খিলগাঁও, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও নগর মাতৃসদন পিএটিসিতে আজ কোনও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।
এছাড়া ঢাকার বাইরে গাজীপুর, মানিকগঞ্জ , মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ , পাবনা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও গাইবান্ধায় কোনও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ২৮ হাজার ৭৪১ জন। দুটি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৮ হাজার ৭৫৬ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এগুলো পুরোটাই দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন।
প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনের মধ্যে ১৪ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সংকট। এদেরকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকারই দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি।
বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভ্যাকসিনের স্টক ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এই কার্যক্রম বন্ধ আছে। মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুরশেদ জানান, ৩০ মে তারিখ থেকেই ভ্যাকসিন কার্যক্রম বন্ধ আছে। চীন থেকে সিনোফার্মের যে ভ্যাকসিন এসেছে তা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের দেওয়ার নির্দেশনা আছে। তাছাড়া যারা দ্বিতীয় ডোজ পায়নি তাদের ধৈর্য ধরার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আমার জেলার নিবন্ধন করা প্রায় ৮১ শতাংশ মানুষই ভ্যাকসিন পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর আগেই জানিয়েছে, পরবর্তী টিকার চালান না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার। তাদের কাছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে বাড়তি টিকার মজুত রয়েছে, তা বিভিন্নভাবে সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। টিকা সংকট দেখা দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২ মে’র পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকার জন্য নিবন্ধন।
অনলাইন ডেস্ক,৮ জুন ২০২১