রাজধানীর আদাবর থানা এলাকার একটি বাসা থেকে তিন বোন একসঙ্গে নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাসা থেকে যাওয়ার সময় তারা ব্যাগে পিএসসি, জেএসএসসির সার্টিফিকেট, টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছেন। নিখোঁজরা হলেন- বড় বোন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকেয়া (১৮), মেজো বোন জয়নব আরা (১৭) ও ছোট বোন খাদিজা আরা (১৬)। মেজো বোন জয়নব আরা ও ছোট বোন খাদিজা আরা এবার একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী টিকটকে আসক্ত ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৪ মিনিটের দিকে তারা আদাবরের শেখেরটেকের পিসিকালচারের খালার বাসা থেকে বের হন। এ ঘটনায় তাদের খালা সাজিদা নওরীন আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
রাতে নিখোঁজদের খালা সাজিদা নওরীন বলেন, আমার বড় বোন তিন বছর আগে মারা যান। আর দুলাভাই অন্য জায়গায় বিয়ে করেছেন। খিলগাঁওয়ে আমার ছোট বোনের বাসায় থাকতো তিন ভাগ্নি রোকেয়া, জয়নব আরা ও খাদিজা আরা। জয়নব ও খাদিজার এসএসসির পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ধানমন্ডি গার্লস হাইস্কুলে। সে কারণে আদাবরে আমার বাসায় এসে তারা দুজন পরীক্ষা দিচ্ছিল। গত ১৫ তারিখে একটি পরীক্ষা হয়েছে। আরও দুটি পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এর মধ্যেই হঠাৎ তারা তিনজন একসঙ্গে বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।
তিনি বলেন, নিখোঁজের পরপরই আদাবর থানায় যাই। কিন্তু থানা থেকে প্রথমে জিডি কিংবা মামলা না নিতে চাইলে আমি কান্নাকাটি করি। আমার কান্নাকাটি দেখে তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা পর একটি জিডি লিপিবদ্ধ করে।
তার তিন ভাগ্নি টিকটক ও ইনস্টগ্রামে আসক্ত ছিলেন জানিয়ে সাজিদা নওরীন বলেন, টিকটকের মাধ্যমে কারও প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে তারা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছি। তারা যাওয়ার সময় তাদের পিএসসি, জেএসএসসির সার্টিফিকেট, টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। বয়স কম হওয়ায় তাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করতাম। তারা আমাদের মোবাইল ছাড়া অন্য কোনো মোবাইল ব্যবহার করতো না। তবে তারা লুকিয়ে কোনো মোবাইল ব্যবহার করতো কিনা তা আমরা জানি না। তারা যেন নিরাপদে ফিরে আসে এটাই আমার চাওয়া।
এ বিষয়ে আদাবর থানা উপ-পরিদর্শক আব্দুল মোমেন বলেন, ওই বাসার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি, তারা তিনজন ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আমরা তাদের অবস্থান শনাক্তের বিষয়ে কাজ করছি। এখনও তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারিনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এর আগে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্লবী থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও সনদ নিয়ে নিখোঁজ হন তিন কলেজছাত্রী। এ ঘটনায় ২ অক্টোবর রাতে নিখোঁজ শিক্ষার্থী দিলখুশ জান্নাত নিশার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় মামলাটি করেন। মামলার আসামিরা হলেন- মো. তরিকুল্লাহ (১৯), মো. রকিবুল্লাহ (২০), জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়ন (১৮)।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে দিলখুশ জান্নাত নিশা, কানিজ ফাতেমা ও নেহা আক্তার নামে তিন বান্ধবী বাসা থেকে বের হন। তারা কলেজ ড্রেস পরে এবং ব্যাগ নিয়ে বেরি হন। পরে নিখোঁজদের পরিবার জানায়, ওই ছাত্রীরা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নগদ টাকা, স্বর্ণের গহনা, নিজেদের সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে যান।
নিখোঁজের ৫ দিন পর ৬ অক্টোবর মিরপুরে প্রবেশের সময় তাদের উদ্ধার করে র্যাব-৪ এর একটি টিম। র্যাব জানায়, ঘটনার পর থেকে র্য্যাব বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিল। তাদের অবস্থান শনাক্তের পর র্যাবের একটি টিম কক্সবাজারে যায়। সেখানে র্যাবের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করেন।
৫ অক্টোবর তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। র্যাবের সদস্যরাও তাদের অনুসরণ করে ঢাকায় আসেন। মিরপুরে প্রবেশের সময় তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।