ছোটবেলা থেকেই সামিয়া আক্তারের স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পড়ালেখার করার। অবশেষে সামিয়ার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পেয়ে। এ বছর ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার। তিনি পেয়েছেন ৭৫.০৫ নম্বর। তার মেধা স্কোর ৯৫.০৫।
চাঁদপুর শহরের নিশিবিল্ডিং এলাকার নিশি রোডের দেলোয়ার হোসেন ও জীবনা বেগমের মেয়ে সামিয়া এবার ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সামিয়ার পিতা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আর মা তিন মেয়েকে বড় করার স্বাপ্ন বুনে যাচ্ছেন। তিন বোনের মধ্যে সামিয়া দ্বিতীয়। অত্যন্ত মেধাবী সামিয়া ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখা করতে ভালোবাসে। মেধাবী এই ছাত্রী শহরের মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সফলতার কৃতকার্য হয়। ছোটবেলা থেকেই স্কুল ও কলেজের সব কর্মকান্ডে অবাধ বিচরণ ছিল সামিয়ার। স্যার-ম্যাম ও সহপাঠিদের প্রিয় ছিল সামিয়া।
পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে ছোটবেলা থেকে কষ্ট করে পড়ালেখা করতে হয়েছে সামিয়ার। তাই নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করতে টিউশন করতেন সামিয়া। শুধু তাই নয়, পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি পরিবারের খরচও বহন করতেন মেধাবি এই শিক্ষার্থী। ঢাবিতে পড়ালেখার খরচ বহনের অননিশ্চিয়তার মধ্যে হাল ছাড়েনি সামিয়া। টিউশনের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা করে ঠিকই পৌঁছেছেন সাফল্যর চূড়ায়।
বাবা-মা আর নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিবিসএস দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চান সামিয়া আক্তার। সামিয়া বলেন, আমি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটি মেয়ে। আমাদের পরিবারের অবস্থা আগেও ভালো ছিল না, এখনও নেই। বাবা অসুস্থ তাই কিছু করতে পারে না। পুরো পরিবার আমি আর আমার বড় বোন মারজানা টিউশনির টাকা দিয়ে চলাই। এভাবে কষ্ট করে এতদূর এসেছি। আর এতদূর আসার পিছনের পরিবারের সাপোর্ট ছিল সবচেয়ে বেশি। কারন পরিবার আমাকে সেই সুযোগ করে না দিলে হয়তো ঢবিয়ান হওয়ার স্বপ্ন আজ পূরণ হতো না।
সামিয়ার কৃতিত্বের প্রসঙ্গতুলে ধরে বলেন, আমার আজকের কৃতিত্বের প্রধান উৎসাহ দাতা হলেন আমার বড় বোন। আর পরিশ্রমকারী হচ্ছেন আমার মা। বাকিটা আমার চেষ্টা-শ্রম। এছাড়া আমার কলেজের শিক্ষাকরা খুব বন্ধুসুলভ ছিল। স্যার-ম্যামদের ট্রুটি কম ছিল না। শিক্ষকরা সব সময় সহযোগিতা করতেন। পুরো কলেজ খুশি হয়েছে ঢাবিতে আমার সুযোগ হওয়ায়। আমার জীবনের প্রথম লক্ষ, আমি জীবনে ভালো মানুষ হতে চাই। পেশা হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট পেশাকে বেছে নিতে চাই। আমি দেশের সৎ ও যোগ্য নাগরিক হয়ে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।
সামিয়ার বড় বোন মারজানা আক্তার বলেন, ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পিছনে সামিয়াকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহ আমাদের উপর সহায় ছিল, তাই সে এই স্থানে আসতে পেরেছে। সামিয়া দিনের বেলা টিউশনি ও ক্লাস করে রাতে পড়াশোনা করত। তার মধ্যে কখন ক্লান্ত ভাব আসেনি। পড়াশোনা করতে গিয়ে ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করত না। আজ এত পরিশ্রক করার কারনেই সে সফল হয়েছে।
সামিয়ার মা জীবনা বেগম বলেন, আমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছে। আমি খুব খুশি। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন, সে জন্য দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মাসুদুর রহমান বলেন, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিয় ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা আনন্দিত। বরাবরের মতই মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা ম্যাডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তারিয়া স্থান পেয়ে আসছে। এবার আমরা আরো বেশি আনন্দিত, সামিয়া মেধা তালিয়া দ্বিতীয় হওয়ায়। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি এবং তার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা থাকবে।
প্রতিবেদকঃ শরীফুল ইসলাম, ৫ নভেম্বর ২০২১