টাস্কফোর্স গঠনের পরও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম

বাজার তদারকিতে সারা দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম। গত সোমবার দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে এ টাস্কফোর্স গঠন করার পর ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম আরো বেড়েছে। এছাড়া নতুন করে দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ময়দা, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও গরুর মাংস। আর সবজির বাজারে তো রীতিমতো আগুন। সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পণ্যের দাম কমাতে ইতিমধ্যে কোনো কোনো পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার। আবার কোনোটির শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারে এখনো সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারব্যবস্থা রীতিমতো অসহায়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দায় পাঁচ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ২০ টাকা বেড়ে ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা ও খোলা পামঅয়েলে তিন থেকে সাত টাকা বেড়ে ১৪৪ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আগে থেকে বাড়তে থাকা ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম আরো বেড়েছে।

এর মধ্যে ফার্মের বাদামি রঙের ডিমের হালিতে দুই টাকা বেড়ে ৬০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে তা ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদরের প্রতিবেদনেও এ পণ্যগুলোর দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া গত মাসে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১১.১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১৪.২৬ টাকা কমবে। কমানো হয়েছে পেঁয়াজের শুল্ককরও। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও পেঁয়াজের আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের গত তিন মাসে ৩ লাখ ৩২ হাজার টন পাম তেল আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। এ সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ কম। কমেছে পেঁয়াজের আমদানিও। গত তিন মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল সাড়ে ৩ লাখ টন। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কী কারণে পণ্যগুলোর আমদানি কম হয়েছে, সরকারের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। তা না হলে পণ্যগুলোর দামের লাগাম টেনে ধরা কঠিন হবে। ইতিমধ্যে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গঠিত টাস্কফোর্সের কাজ শুরু প্রসঙ্গে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মেজবাউল করিম গতকাল ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। বিশেষ করে বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। দাম কমতে একটু সময় লাগবে।

চড়া সবজির দাম

বাজারে ভোক্তাদের রীতিমতো ভোগান্তিতে ফেলেছে সবজির দাম। দু-একটি সবজি বাদে অধিকাংশ সবজির দরই ১০০ টাকার আশপাশে। এ পরিস্থিতিতে সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বচসা এখন নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, বরবটি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, করল্লা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ট্যারশ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে পেঁপের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। তবে কাঁচা মরিচের দর সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। গতকাল শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা হামিদুর বলেন, সারা দেশে বৃষ্টির কারণে অনেক সবজিখেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কমে আসবে।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১২ অক্টোবর ২০২৪

Share