দু’দিনের টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে এবং গাছ চাপায় ১৩০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চারজন সেনা সদস্যও রয়েছেন; তারা মানিকছড়ি ক্যাম্পের সদস্য।
সোমবার (১২ জুন) রাত থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুন) ভোর পর্যন্ত পাহাড় ধসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত সময়ে ৯৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা।
পরে সন্ধ্যার পরে উদ্ধার করা হয় আরও কয়েকজনকে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৩০ জন। তবে মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টায় উদ্ধার কাজ স্থগিত রাখা হয়।
বুধবার (১৪ জুন) সকালে উদ্ধার কাজ আবার শুরু হবে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। তবে রাতে কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ রাঙ্গামাটিতে ৯৮, বান্দরবানে ০৬ এবং চট্টগ্রামে ২৫ জন রয়েছেন। নিখোঁজ আছেন আরও অনেকে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান, দুই দিনে পাহাড়ধসে সেনাসদস্যসহ ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি সদরে ৪৫ জন, কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৬ জন, বিলাইছড়িতে ৩ জন ও জোড়াছড়িতে ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক রাশিদুল হাসান জানান, পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর চার সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন। তাঁরা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপেরাল আজিজ ও সৈনিক শাহীন। ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, একজন সেনাসদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক আজ বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করেন।
মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবান শহরের লেমু ঝিড়ি পাড়া, কালাঘাটা ও ক্যচিংঘাটা এলাকায় পাহাড় ধসে তিন ভাইবোনসহ ৬ জন নিহত হন। নিহতরা হলেন শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৪০), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (০৮), কালাঘাটা এলাকার রেবা ত্রিপুরা (২২), লেমুঝিরি আগাপাড়ারলাল মোহন বড়ুয়ার তিন ছেলে-মেয়ে শুভ বড়ুয়া (০৮), মিঠু বড়ুয়া (০৬) ও লতা বড়ুয়া (৫) বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিক উল্লাহ সত্যতা নিশ্চিত করেন।
নিহতদের মধ্যে রাঙ্গামাটি শহরের মানিকছড়ি এলাকার সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তানভির, মেজর মাহফুজ, করপোরাল আজিজ ও সৈনিক শাহিনের নাম জানা গেছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত পাঁচ সেনা সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কাউখালী এলাকার নুড়িয়া আক্তার, আইয়ুস মল্লিক, রুমা আক্তার, অমিত চাকমা, হাজেরা বেগম, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস, সোনালী চাকমা ও কাপ্তাই উপজেলার কারিগরপাড়ার নিকি মারমা ও অনুচিং মারমার নাম জানা গেছে। সদর হাসপাতালের আরএমও মং ক্যাচিং সাগর এ তথ্য জানিয়েছেন।
অপরদিকে ভোরে চট্টগ্রামে মোট ২৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি কানগুনিয়া এলাকায় পাহাড় ধসে চারজন, হালিশহরের ফইল্লাতলী বাজার এলাকায় দেয়াল ধসে ১ জন, বাকলিয়ার চাক্তাইয়ে বজ্রপাতে ১ জন এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ও রাজানগর এলাকায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন ওই এলাকার আজগরের মেয়ে মাহি আক্তার (০৩), চি চাও খিয়াংয়ের স্ত্রী মোখাও খিয়াং (৫০), খাই লাও খিয়াংয়ের মেয়ে মি মাও খিয়াং (১৩), চি লাও খিয়াংয়ের মেয়ে খেও চাপ খিয়াং (১০)।
আহতরা হলেন চেইন খিয়াং ও ছিলাও খিয়াং। এছাড়া ঝড়ে ফইল্লাতলী বাজার এলাকার একটি বাড়ির দেয়াল ধসে মোহাম্মদ হানিফ (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত বাকিদের নাম জানা যায়নি। (বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ১১: ০০ পিএম, ১৩ জুন ২০১৭, মোঙ্গলবার
ডিএইচ