কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ গ্রামের একটি নির্জন বাড়িতে একাই বসবাস করতেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা মাজেদা বেগম। মাজেদা ওই গ্রামের প্রয়াত শিক্ষক মনিরুল ইসলামের স্ত্রী। টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বৃদ্ধার ঘরে প্রবেশ করে ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর পা বেঁধে নির্মমভাবে ওই বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘাতকরা। এ ঘটনার পরদিন দেবিদ্বার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছেলে মো.মারুফুল আলম। কিন্তু থানা পুলিশ হত্যাকাণ্ডের কোন কূল-কিনারা করতে পারেনি।
গত ২০ সেপ্টেম্বর সউদ্যোগে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা। অবশেষে মাত্র সাত দিনের মধ্যে ক্লু-লেস মামলাটির রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। গ্রেপ্তার করা হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজনকে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয়েছে লুট হওয়া স্বর্ণালংকারও।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই, কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মো.তৌহিদুর রহমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, মো.মতিউর রহমান, হিলাল উদ্দিন, বিপুল চন্দ্র দেবনাথসহ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান বলেন, আলোচিত এই মামলাটি ছিলো একেবারেই ক্লু-লেস। আমাদের পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার স্যারের দিকনির্দেশনায় আমরা হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করি। মামলার তদন্ত শুরুর মাত্র সাত দিনের মধ্যে সোমবার বিকেলে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যায় জড়িত জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানি গ্রামের গ্রামের মিজানের ছেলে মো.রনিকে (২২) গ্রেপ্তার করি। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লুট হওয়া স্বর্ণের কানের দুল উদ্ধার করি।
জিজ্ঞাসাবাদে রনি পিবিআইকে জানিয়েছে, তারা তিনজন মিলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো জমি বিক্রির টাকা লুট করা। কিন্তু ঘরে কোন টাকা ছিলো না। আর তারা অনেকগুলো গহনা লুট করলেও কানের দুল ছাড়া সব ছিলো ইমিটেশন। কানের দুল সাড়ে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে তারা। এর মধ্যে রনি ভাগ পায় ২৬’শ টাকা। বাকিটা অপর দু’জন ভাগ করে নেয়। হত্যার সময় মাজেদা নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি ঘাতক রনির আঙুলে কামড় দিয়েছেন। রনির আঙুলে সেই দাগও পাওয়া গেছে।
পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান আরও বলেন, মামলার অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত রনিকে মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই, কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মো.তৌহিদুর রহমান বলেন, খুন হওয়া মাজেদার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁর স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। ছেলেরা কুমিল্লা ও গাজীপুরে থাকেন। মেয়েরা থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। বাড়িটিতে তিনি একাই থাকতেন। এই সুযোগটিতে কাজে লাগিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শেষে দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২৮ সেপ্টম্বর ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur