রাজধানীর মৎস ভবনের সামনের মোড়ে দীর্ঘ যানজট। রিকশায় মায়ের সঙ্গে বসে আছেন জাভেদ আহম্মেদ। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকায় ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে রিকশাটি।
ঠিক এই সময় লালচুড়ি পরা একটি হাত পড়লো জাভেদের কাঁধে। হাতটি হঠাৎ কাঁধে পড়ায় চমকে ওঠে ফিরে তাকাতেই তিনি শুনতে পেলেন- ‘এই, টাকা দে’। কন্ঠ শুনে বুঝতে পারেন জাভেদ। সঙ্গে সঙ্গে ‘টাকা নেই’ বলে বিপদটা বাড়িয়ে দিলেন।
তখন জাভেদকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একনাগারে বলতে থাকলো- ‘টাকা দিবি না কেন, টাকা দিবি না কেন, টাকা না দিলে বিয়ে কর। কী, ওই দিকে তাকাস ক্যান, আমাকে কি পছন্দ হয় না? আমি কি সুন্দর না?’ ইত্যাদি ইত্যাদি…
শুধু জাভেদ নয়, হিজড়াদের হয়রানীর এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। কখনো মায়ের সামনে, কখনো বোনের সামনে আবার কখনো বাবার সামনে এমন অস্বস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে জাভেদের মতো অন্যদেরও।
প্রথমে চাঁদা দাবি, পরে অকথ্য ভাষায় গালাগালি; শেষে মারামারি করতেও দ্বিধাবোধ করছে না হিজড়ারা।
গত কয়েক দিনে রাজধানীর ব্যস্ততাপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে এসব চিত্র। বেপরোয়া হিজড়ারা এক একটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অভিনব পন্থায় টাকা আদায় করছে।
সাধারণত দীর্ঘ সিগন্যালের কারণে যানজটে আটকে থাকা পথচারীদের হয়রানির মুখে ফেলে হিজড়াদের টাকা আদায় করা এখন রাজধানীতে নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়া, কখনো বাসে ওঠে, আবার কখনো থেমে থাকা রিকশায় চাঁদাবাজি তো আছেই।
রাজধানীর মহাখালী হয়ে আসা ‘আজমেরী গ্লোরি’ পরিবহণের একটি বাসে উঠলো শেফালি (ছদ্মনাম) নামের এক হিজড়া। তাকে বাসে উঠতে দেখে অনেক যাত্রীই বাসের জানালার ওপারে মুখ লুকানোর চেষ্টা করছেন।
কিন্তু শেফালি বাসের ভাড়া আদায়ের মত চাঁদা আদায় শুরু করেছে প্রথম সিট থেকে। এদিকে, বাসের দ্বিতীয় সিটে স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন রফিক। আগের সবাই টাকা দিলেও তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
পাশে থাকা রফিকের স্ত্রী হিজড়া শেফালিকে বললেন, ‘আপনাকে টাকা দিবো কেন!’ তখনই শুরু হলো গালাগালি আর অশ্লীল কথার সংমিশ্রণের ঝড়।
অগত্যা ১০ টাকা বের করে দিলেন রফিক। তখন ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকার আবদার করে বসলেন হিজড়া শেফালি। পরে সবার অনুরোধে ২০ টাকায় সমঝোতা হলো।
পরে সাংবাদিক পরিচয়ে শেফালির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, ‘হিজড়া বলে কেউ কাজ দেয় না, খেতে দেয় না আবার পরিবারও গ্রহণ করে না। তাই এগুলো ছাড়া আমাদের আর কী করা আছে?’
তাই বলে মানুষকে এভাবে অপমান করে! তার সোজা উত্তর ‘অপমান না করলে কি কেউ পকেট থেকে টাকা বের করে! পকেট থেকে টাকা বের করা খুব কঠিন কাজ রে ভাই।’
সরকার এখনতো আপনাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। জবাবে শেফালি বলেন, ‘এটা আমরাও শুনি, কাজের বেলায় নাই।’ এটুকু বলেই চলে গেলেন তিনি। গল্প করা মত সময় তার হাতে নেই। আবার অন্য বাসে উঠতে হবে তাকে। মানুষকে অপমান করে পকেট থেকে বের করতে হবে টাকা! (বাংলামেইল)
: আপডেট ০১:০৩এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শক্রবার
ডিএইচ