আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। অবশ্য এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও ফাঁসচক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাইয়ে দেওয়ার প্রচারণা যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছেই।
উল্লেখ্য, আগামী সোমবার থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। শেষ হবে ১৩ মে। এবার সারা দেশ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
জানা গেছে, গত এসএসসির বেশির ভাগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আসার পর আসন্ন এইচএসসিতে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্তাব্যক্তিদের জন্য। এ জন্য এমসিকিউ পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে আনা, আধা ঘণ্টা আগে হলে প্রবেশ, প্রশ্নের সেট সংখ্যা নির্দিষ্ট করে না জানানোসহ আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রচারণা থেমে নেই।
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যদিও সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, পরীক্ষায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ থাকবে না। নাহিদ বলেন, পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২৫ মিনিট আগে সেটকোড জানিয়ে দেওয়া হবে। পরীক্ষার দিন সকালে কলেজগুলোকে ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করতে হবে। আর ট্রেজারির নিকটবর্তী কলেজগুলোতে মাত্র আধঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর পরীক্ষা চলাকালীন সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এদিকে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সরকারের এসব নানা পদক্ষেপের মধ্যেও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অপতৎপরতা থেমে নেই বলে জানা গেছে। ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দেখা গেছে, ‘PSC • JSC • SSC • HSC Exam Helping Center’ নামে ফেসবুকের পাবলিক গ্রুপকে প্রশ্ন কেনা-বেচার প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশিকুর রহমান হৃদয় নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী গতকাল এক পোস্টে লেখেন, এইচএসসির প্রতিটি প্রশ্ন তিনি ৫০০ টাকায় পরীক্ষার আগে পাইয়ে দেবেন।
আগ্রহীদের তিনি এক আলাদা গ্রুপে নেবেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রশ্ন কমনের পর টাকা নেবেন— এমন কথা বলে প্রশ্ন ফাঁসের প্রচারণা চালাচ্ছেন রাকিব রায়হান। ফারহান আহমেদ নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, প্রশ্ন নিতে চাইলে দ্রুত ইনবক্সে মেসেজ দিতে হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফেসবুকের পোস্টে এইচএসসির প্রশ্ন বিক্রির প্রচারণা চালাচ্ছে প্রশ্ন ফাঁস চক্র। তারা প্রশ্ন ফাঁসের আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা মোবাইল নম্বরও ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসে প্রচারণাকারীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতনরা।
অভিভাবকরা বলছেন, প্রশ্ন ফাঁস করে কেউ যদি পরীক্ষা দেয়, আর অন্যরা যদি প্রশ্ন ফাঁস ছাড়া পরীক্ষা দেয়— তবে তাদের মূল্যায়ন সমান হবে না। শিক্ষাবিদরা বলছেন, যে কোনো মূল্যে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে হবে। না হলে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করার বিষয়ে বিটিআরসির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফেসবুক মনিটরিং করার যন্ত্রও আমাদের নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় পরীক্ষার কেন্দ্র বরাদ্দ দেওয়া, সন্তানকে অনৈতিক সুবিধা দিতে অভিভাবকদের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাইয়ে দেওয়াসহ প্রশ্ন ফাঁসের জন্য নানা কারণকে তিনি দায়ী করেছেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ১০ পি.এম ৩১মার্চ,২০১৮শনিবার
এ.এস