গত বছর জুলাই-আগস্টের বন্যায় কৃষক হারুন পাটোয়ারীর দুই একর আমন খেত পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষতি পোষাতে নভেম্বরে ওই দুই একর জমিতে টমেটোর আবাদ করেন। ফলনও হয় ভালো। চলতি মাসে বিক্রি শুরু করেন টমেটো। কিন্তু দাম একেবারে কম থাকায় বড় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁকে। উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয়মূল্য অনেক কম হওয়ায় টমেটোতে তাঁর তিন লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। এতে তিনি হতাশ। ধারদেনা করে টমেটো চাষ করে বড় বিপাকে পড়েছেন বলেও জানালেন হারুন পাটোয়ারী।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী গ্রামে হারুন পাটোয়ারীর বাড়ি। তাঁর মতো এভাবে উপজেলার দুই শতাধিক কৃষক এবার টমেটো চাষ করে ধরা খেয়েছেন। স্থানীয় বাজারে ও খেত থেকে অনেকটা পানির দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত টমেটো। বড় লোকসানের ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন টমেটো চাষিরা। অনেকে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে (গত নভেম্বর থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত) ৬০ হেক্টর কৃষিজমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। দুই শতাধিক কৃষক এসব টমেটোর আবাদ করেছেন। টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। গত বছর টমেটোর আবাদ হয়েছিল ৫০ হেক্টর জমিতে।
গত বুধবার দুপুরে উপজেলার দিঘলদী, বাইশপুর, শীলমন্দি, উপাদী, নায়েরগাঁও উত্তর, নায়েরগাঁও দক্ষিণ, খিদিরপুর, আশ্বিনপুর ও ঢাকিরগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ খেতের টমেটো পেকে গেছে। আধা পাকা টমেটোর খেতও রয়েছে কিছু। খেত থেকে টমেটো তুলে সেগুলো বিক্রির জন্য সেখানেই পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কৃষকেরা। দাম খুব কম থাকায় কেউ কেউ খেতেই রেখে দিচ্ছেন টমেটো। পরিচর্যা করছেন টমেটোখেতের। বেশির ভাগ টমেটোচাষির চোখমুখ বিষণ্নতায় ছেয়ে গেছে।
দিঘলদী এলাকার কৃষক মো. টিপু বলেন, এবার তিনি আড়াই একর জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। বাম্পার ফলনও হয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন, টমেটো বিক্রি করে এবার ভালো টাকা লাভ করবেন এবং শোধ করবেন ধারদেনা। পরিবারের অর্থকষ্ট দূর করবেন। কিন্তু তাঁর সেই আশায় গুড়েবালি। তাঁর ভাষ্য, ১৫-২০ দিন ধরে বাজারে তিন থেকে চার টাকা কেজির দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। আর খেতে বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকায়। অনেকটা পানির দরেই বিক্রি করছেন এসব। প্রতি মণ টমেটো উৎপাদনে তাঁর খরচ হয়েছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। অথচ প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। প্রতি মণ টমেটোতে লোকসান হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। তাঁর মোট লোকসান হয়েছে আড়াই লাখ টাকার বেশি। এতে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন।
খিদিরপুর এলাকার কৃষক মো. শাহ আলম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় টমেটোর ফলন বেশি অইছে। এলিগা দাম পইড়া গেছে। চাষের খরচও উঠব না এইবার। পাকা টমেটো খেতে রাইখা কী করুম। লোকসান দিয়াই টমেটো বেচতাছি। বেচতে গেলে দাম পাই না, না বেচলে খেতেই এগুলি পইচা যাইতাছে। টমেটো নিয়া খুব বিপাকে আছি।’
এবার উপজেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম। তিনি বলেন, বাজারদর একেবারে কম থাকায় কৃষকেরা টমেটোর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এতে টমেটো আবাদে কৃষকদের ঝোঁক কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জোগান বা সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।
মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধি,৩০ মার্চ ২০২১