চাঁদপুরের ঝুলন্ত সেতু প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার মধ্যে সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে দুই জেলার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সড়ক যোগাযোগ এবং উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে মতলব-গজারিয়া সেতু বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল এ এলাকার জনগণ। দীর্ঘদিনের এ দাবি বাস্তবায়িত হতে চলছে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) একনেক সভায় এ সেতু অনুমোদন হওয়ার কথা শুনতেই মতলব তথা চাঁদপুর জেলার মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। এ খবর পেয়ে মতলবের বিভিন্ন জায়গায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

ঝুলন্ত সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এর আওতায় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও চাঁদপুরের মতলবের মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর ঝুলন্ত সেতু নির্মিত হবে। প্রকল্প চলবে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। সাধারণত প্রকল্পের মেয়াদ একনেকে পাস করার আগে থেকে শুরু হয়। তবে এই প্রকল্প পাস হয়ে থাকবে, পরে কাজ শুরু হবে। পুরোপুরি দেশীয় অর্থে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

চাঁদপুরসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে মতলব-গজারিয়া-ভবেরচর সংযোগ সেতু নির্মিত হচ্ছে।

জানা যায়, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের অংশবিশেষ (জামালপুর) ও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ও গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের অংশবিশেষ মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে ঝুলন্ত দৃষ্টিনন্দন এই সেতু।

এদিকে ঢাকা থেকে গৌরীপুর-মতলব উপজেলা ও চাঁদপুর জেলা সদরে বর্তমান দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। কিন্তু ঢাকা থেকে ভবেরচর হয়ে গজারিয়া উপজেলার সীমানার ওপর দিয়ে মতলব-গাজারিয়া ভবেরচর সংযোগ সেতু হলে চাঁদপুর জেলা সদরের দূরত্ব সর্বোচ্চ ৬৮ কিলোমিটার হবে। এই সেতু নির্মাণ হলে বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর, ফেনীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দ্রুত সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে পৌঁছতে পারবেন।

সেতুর দৈর্ঘ্য ১.৮৫ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ৭.৫১ কিলোমিটার (গজারিয়া অংশে ৫.৪৬০ কিলোমিটার ও মতলব উত্তর অংশে ২.০৫৫ কিলোমিটার)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘ১ এর সাথে ইন্টারচেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ২.১ কিলোমিটার। নদী শাসন কাজের দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার। টোল প্লাজা একটি এবং ওজন স্টেশন হবে দুইটি। ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স হবে ২৫ মিটার। এই সেতু বাস্তবায়ন হলে জিডিপি প্রবৃদ্বির হার বাড়বে ০.২৩%।

গজারিয়া-মতলব সেতুটি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এ সেতু নির্মাণের ফলে চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী এবং ভোলা জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে যাতায়াতের দূরত্ব সময় এবং ব্যয় হ্রাস পাবে।সেতুটি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (ঘ-১) এর উপর যানবাহনের চাপ কমবে। সেই সাথে চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলায় অনুমোদিত দুইটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
এই সেতু দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অবদান রাখবে। নদীর অববাহিকায় নতুন শিল্পাঞ্চল’সহ পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যা অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। সেতুটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ জনগণ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা প্রাপ্ত হবে।

সেতুটির মধ্যে নদীর মূল প্রবাহে কোন পিলার থাকবে না। এজন্য নদীর প্রবাহে কোন বাধা সৃষ্টি হবে না। সেতু নির্মাণে ই ডি সি এফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড) কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক সহজ শর্তে (০.০১%-০.০৫%) হারে ঋণ দিবে ৩,৫১৩ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা এবং সরকারি ঋণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি ৭২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। টাকা ফেরত প্রদানের ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড ৪০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর।
উল্লেখ্য, মতলব-গজারিয়া সেতুটি ২ লেনের ও ৬শ’ কোটি টাকায় এলজিইডির মাধ্যমে নির্মান করার প্রস্তাব ছিল। পরে শরীয়তপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকজন এই পথে যাতায়াতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সেতু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৪ লেন বিশিষ্ট ৪ হাজার ১শ’ কোটি টাকা ব্যায়ে দেশের প্রথম ঝুলন্ত সেতু একনেকে অনুমোদিত হয়।

চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ-সদস্য নুরুল আমিন রুহুল জানান, ৫০ বছর ধরে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। এ সেতুটি নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যসহ উন্নয়নের এক মাইল ফলক উন্মোচিত হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, মতলব-গজারিয়া ভবেরচর সংযোগ সেতু হবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তারের ঝুলন্ত একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নের সর্বশেষ ধাপ হলো একনেক সভায় অনুমোদন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এ সেতুর অনুমোদন করায়।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

Share