চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ধসে পড়ার আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর। উপজেলার অন্যতম সেরা এই বিদ্যালয়টির পলেস্তারাসহ ছাদ টুকরো-টুকরো করে ভেঙে পড়ার কারণে চলতি বছর থেকে ভবনটিতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে ৮২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা।
১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে দোতলা ভিতবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। গত কয়েক বছর যাবৎ ভবনটির পলেস্তারা খসে পড়লেও তা জোড়াতালি দিয়ে (সংস্কার করে) ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে ছাদের বিভিন্ন অংশ টুকরো-টুকরো করে ভেঙে পড়তে শুরু করে। সর্বশেষ চলতি বছর তা ব্যাপক আকার ধারণ করলে ভবনটিতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে ৬ কক্ষবিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন, ৩ কক্ষবিশিষ্ট ও ২ কক্ষবিশিষ্ট দু’টি একতলা ভবন এবং ১ কক্ষবিশিষ্ট একটি অফিস রুম রয়েছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট ভবনটিতে ৩ কক্ষের কাজ নির্মাণাধীন। দোতলা ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বর্তমানে এখানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ৮২০ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৫টি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।
অথচ বিদ্যালয়টিতে এক শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করলে ১৭টি শ্রেণীকক্ষ এবং দুই শিফটে পরিচালনা করলে ১১টি শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ে ৫টি শ্রেণীকক্ষ থাকায় বিপাকে রয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাই বাধ্য হয়েই এই ৫টি শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।
সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মাণের আবেদন জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা বেগম। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ৬ কক্ষবিশিষ্ট দোতলা ভবন জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ভীতসন্ত্রস্ত এবং তারা আতঙ্কিত। এই অবস্থাতে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অভিভাবকরা নারাজ।
ভালো পড়ালেখার কারণে অভিভাবকের অন্যতম পছন্দ এই বিদ্যালয়টি। নামে বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের পড়ালেখা চলমান। উপজেলার এমনও বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে এক থেকে দেড়শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে এবং তাও আবার বছর শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে খুঁজে এনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে হয়।
অথচ এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর অভাব নেই, কিন্তু শ্রেণীকক্ষের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। তাই যত দ্রুত সম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে তার স্থলে নতুন একটি বহুতল নির্মাণের আবেদন তাদের।
দোতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শ্রেণীকক্ষের চরম সংকটে ভুগছি উল্লেখ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা বেগম বলেন, বসার মতো কোন স্থান না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে আছি আমরা। নতুন করে ভবন নির্মাণ না হলে, পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙা প্রয়োজন। তা নাহলে, যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কোমলমতী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি দ্রুত ভেঙে সেখানে নতুন করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি জহিরুল ইসলাম মামুন বলেন, পুরাতন দোতলা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্রুত ভাঙা প্রয়োজন এবং আমাদের এখানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই শ্রেণীকক্ষের সঙ্কট সমাধানের জন্য জরুরিভিত্তিতে নতুন ভবন প্রয়োজন।
এ বিষয়ে রান্ধুনীমূড়া ক্লাস্টার কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান জানান, জরুরিভিত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে সেই তালিকার ১১ নম্বরে হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, শ্রেণীকক্ষের সংকট সমাধানের জন্য সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় নতুন করে তিনটি কক্ষ নির্মাণাধীন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, সম্প্রতি অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। আবার কিছু ভবন নির্মাণের অপেক্ষায়। এর মধ্যে নতুন করে আরো ৪৮টি বিদ্যালয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে বলে তিনি জানান।
স্টাফ করেসপন্ডেট,৮ জানুয়ারি ২০২১