ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ভবনেই পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা

দূর থেকে দেখণে বোঝার উপায় থাকে না, এটি কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাছে গেলে চোখে পড়ে, খসে পড়া দেয়ালের পলেস্তারে বেড়ে উঠছে লতাপাতার পরগাছা। আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল। ৩টি শ্রেণীকক্ষের ১টি ২ পাশের দেয়াল খসে পড়তে পড়তে মাটিতে মিশে গেছে বহু বছর আগে। উপরে নেই কোন ছাউনি। আর অবশিষ্ট ২টি শ্রেণীকক্ষের ভাঙা দরোজা, নেই জানালাও। ফলে দক্ষিণ বাতাসের সাথে ভেসে আসছে মাত্র ২ হাত দূরত্বে থাকা পাশের বাড়ির খোলা লেট্রিন আর গোয়াল ঘরের দুর্গন্ধ।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই অমানবিক ভাবে চলছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৬২নং নিজ গাছতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভবন এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আর শিশু সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরাও। অথচ এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যেন একেবারেই নির্বিকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৬২নং নিজ গাছতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩ কক্ষ বিশিষ্ঠ (সাথে ছোট্ট একটি অফিস রুম) টিনসেট ভবনের এই বিদ্যালয়টি ১০১৬ সালে এমপিও ভুক্ত করে সরকার। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও একটি নতুন ভবন না হওয়ায় বর্তমান ভবনটির শ্রেণীকক্ষগুলো একেবারেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। মাথার উপর টিনের চাল কোথাও আছে, কোথাও ফুটো, আবার কোথাও একেবারেই নেই। দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ে সেখানে পরগাছা জমেছে। অনেক কক্ষের দরজা-জানালা নেই। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ১জন প্রধান শিক্ষক ও ৪ জন সহকারি শিক্ষাক পাঠদান করছেন। নার্সারি বিভাগ থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলে ক্লাস করতে ভীষণ ভয় লাগে। কখন যে দেয়াল ভেঙে পড়ে এই আতঙ্কে থাকি। ছাদের পলেস্তারা ভেঙে ধুলাবালি চোখে ও শরীরে পড়ে। পড়াশোনা করতে খুব সমস্যা হয়।’ জনালাাগুলো গ্রিল কিংবা দরোজা না থাকায় দেয়ালের সাথে থাকা পাশ্ববর্তী বাড়ির খোলা লেট্রিন আর গরুঘরে দুর্গন্ধে ক্লাসেরুমে বসা যায় না।

বেশ ক’জন অভিভাবকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ‘সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে ভয়ে থাকতে হয়। বাচ্চা ফেরত আসবে কি না?। কাছাকাছি ভালো কোন স্কুল না থাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমাদের সন্তানরা ক্লাস করতে দিতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে শুনতে পাই অনেক অফিসার এসে দেখে যান। কিন্তু আজও নতুন ভবন আর হলো না।’

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। তারাও শিক্ষার্থী এবং নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ হাফসা বেগম বলেন, ১৯৯৬ সালে ১৬২নং নিজ গাছতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি। ১০১৬ সালে এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর আমরা নতুন একটি একাডেমিক ভবনের জন্যে সরকারের কাছে আবেদন করি। ২০১৭ সালে নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দ আসে। কিন্তু বিদ্যালয়ের ভূমির দুটি অংশ দুই মৌজার হওয়ায় সে কাজটি আটকে যায়। আমরা পরবর্তীতে ভূমির মৌজা সংক্রান্ত জটিলতারও সমাধান করি। কিন্তু ২০২১ সালে সেই বরাদ্দটি ফেরত চলে যায়। তিনি একটি নতুন ভবনের জন্য চাঁদপুরের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে যেকোনো সময় বড় কোনো দুঘর্টনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ের এ দুরাবস্থা থেকে উত্তরণে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১ অক্টোবর ২০২২

Share