চাঁদপুর

ঝুঁকিপূর্ণ চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রাীদের নানা সমস্যায় বাড়ছে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা

চাঁদপুরের অস্থায়ী নৌ টার্মিনালকে স্থায়ী ও আধুনিকায়ন না করায় নানা সমস্যায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। এখানে যাত্রীদের সমস্যা দেখার মতো কেউ নেই! কর্তৃপক্ষ টার্মিনালে প্রবেশ ফি রাখলেও সেবার মানের কোনো খবর নেই। টয়লেট নেই, নেই বসার স্থান। ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাংওয়ে দিয়েই যাত্রীরা উঠানামা করছেন। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এই টার্মিনাল দিয়ে শত-শত যাত্রী নৌ-পথে যাতায়াত করেন। চাঁদপুর মাদ্রাসা রোডে অস্থায়ী নৌ-টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন চাঁদপুর-ঢাকা ও চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর-বরিশাল নৌ পথে চলাচল করছে অন্তত ৮০টি ছোট বড় লঞ্চ। প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী এ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাটে জনপ্রতি তিন টাকা প্রবেশ ফি নিলেও যাত্রী সেবার মান বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। হাসমত আলী, রেদওয়ান ও সাইফুদ্দিন নামে ৩ যাত্রী জানান, আমরা নিয়মিত নৌ পথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে চলাচল করি। এ টার্মিনালে নূন্যতম যাত্রীসেবা নেই। লঞ্চ না আসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঘাট থেকে অন্তত চারশ ফুট দূরে ছোট্ট একটা অপেক্ষমান কক্ষ থাকলেও সেখানে রিকশা, সিএনজি স্কুটার ও অটোরিকশা চালকরা বসে আড্ডা দেয়।

এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব যেমন টয়লেট নেই, তেমনি নেই কোনো পাবলিক টয়লেটও। অথচ ঘাটে প্রবেশ ফি নির্ধারিত হারে আদায় করা হচ্ছে।

জানা যায়, ব্রিটিশ শাসন আমলে আইজি এন্ড আরসিন কোম্পানি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে স্টিমার ঘাট এবং রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠা করে চাঁদপুর নৌ-বন্দরের কার্যক্রমকে গতিশীল করে। তখন অবিভক্ত বাংলার সাথে আসাম-বেঙ্গল সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা এ নদী বন্দরকে ঘিরেই গড়ে উঠে। অথচ যুগের পর যুগ পার হলেও আজো চাঁদপুরে একটি স্থায়ী নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ হয়নি। পাকিস্তান শাসনামলে স্টিমার ঘাট, রেল স্টেশন সংলগ্ন স্থানে বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনা করে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ও নৌ-বন্দর টার্মিনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ২০০০ সালের আকস্মিক ভয়াবহ ডাকাতিয়া নদীর ভাঙনে চাঁদপুর রেল স্টেশন ও লঞ্চঘাটের অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

এরপর থেকে নৌ ও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন সরকার পুরাতন লঞ্চ টার্মিনালের কিছু দূরে পূর্ব দিকে নতুনভাবে চাঁদপুর লঞ্চঘাট নির্মাণ করে। ১৯৯৪ সালের ২০ আগস্ট মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে সৃষ্ট ঘূর্ণি স্রোতের কবলে কাত হয়ে ‘এম.ভি দিনার’ নামে একটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। সেই সময় শতাধিক যাত্রীর সলিল সমাধি হয়। তারপর থেকে নিরাপদ নৌপথ এবং নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ শহরের মাদ্রাসা রোডে বিকল্প আরেকটি লঞ্চঘাট নির্মাণ করে। বর্ষা মওসুমের তিন থেকে চার মাস এখানেই লঞ্চঘাট স্থানান্তরিত হয়ে আসছে। এ লঞ্চঘাট দিয়েও চলে দীর্ঘদিন টানা-হেঁচড়া। অবশ্য শেষ পর্যন্ত গত দুই বছর যাবৎ মাদ্রাসা রোডে বিকল্প লঞ্চ ঘাটই ব্যবহার করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখানে স্থায়ীভাবে লঞ্চঘাট করার সিদ্ধান্ত হলেও এর আধুনিকায়নে বা স্থায়ী টার্মিনাল তৈরি কবে নাগাদ শুরু করা হবে এরকম কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান যাত্রী ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, চাঁদপুরে একটি আধুনিক নৌ টার্মিণাল নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। আমরা এখনো কোনো আর্থিক বরাদ্দ পাইনি। এ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি লঞ্চঘাটের ব্যাপারে বৈঠক হয়েছে। তারা চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট আধুনিকায়নের ব্যাপারে অর্থায়ন করবে বলে আশা দিয়েছে। সম্ভবত আগামী মার্চ মাসে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ভোলা বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নদীপথে ভ্রমণকে নিরাপদ মনে করে। যে কারণে চাঁদপুর নৌ বন্দর হয়ে নিজ গন্তব্যে যাতায়াতে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করে। তাই যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে শিগগির চাঁদপুরে একটি স্থায়ী নৌ-টার্মিনাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী যাত্রী সাধারণ।

অভিজ্ঞ মহলের মতে আগামী বর্ষার আগেই চাঁদপুরবাসীকে ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা একান্ত প্রয়োজন।

||আপডেট: ১০:১৭ অপরাহ্ন, ১৮ মার্চ ২০১৬, শুক্রবার

এমআরআর

Share