ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে কারেন্ট সুদের জালে জড়িয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। সেই সাথে হারাচ্ছেন ভিটে বাড়ি ও সুখের সংসার। দ্রুত সুদের টাকা বৃদ্ধি হয় বলে এই সুদে কারবারের নাম হয়েছে কারেন্ট লোন। একশ টাকায় সপ্তহে ২০ টাকার অস্বাভাবিক সুদ দিতে হয়। হরিণাকুন্ডু শহরের হাসপাতাল মোড়, পার্বতীপুর, জটারখালী, লালন বাজার, ভোড়াখালী, দখলপুর বাজার, জোড়াদহ, ভায়না, শাখেরীদহ বাজারসহ প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এই কারেন্ট সুদের জমপেশ ব্যবসা চলছে।
১০/১২ জনের সমিতি গঠন করে আবার গোপনে কতিপয় মানুষ চড়া সুদে টাকা দাদন দিচ্ছে। শহর ও গ্রামের অসহায় ও মধ্যবিত্ত মানুষ এ সব সমিতি থেকে ঋন নিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। হরিনাকুন্ডু শহরের হাসপাতাল মোড়ের নবিছদ্দিন ৪০ হাজার টাকা কারেন্ট লোন নিয়েছিলেন। তিনি ৬ লাখ টাকা দেয়ার পরও তার সুদ শেষ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত শহরের বাড়ি সুদখোরদের নামে লিখে দিতে হয়েছে। আশরাফুল নামে এক ব্যক্তি হরিলাকুন্ডুর হাসপাতাল মোড়ের সুদখোর রবিউলের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সুদাসলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েও তিনি রেহায় পাননি। শেষ পর্যন্ত হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তিনি সুদখোরদের হাত থেকে বাঁচেন।
হরিনাকুন্ডুর হাসপাতাল মোড়ের দধি ব্যবসায়ী সুজন ও ফল ব্যবসায়ী শিমুল, ধলা, ইলেক্ট্রনিক ব্যবসায়ী আরিফ, জোড়াদহের কাদের মৌলভীর ছেলে মৃদৃল ও একই গ্রামের আনিছুর রহমানসহ বহু মানুষ সুদখোরদের অত্যাচারে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনুসন্ধান করে জানা গেছে হাসপাতাল মোড়ের আইনাল ও তার ছেলে মিলন, রবিউল, মান্দারতলার দেলু, সাতব্রীজের রণি, ভবানীপুরের বাচ্চু মোল¬া, ঘোড়দার আব্দুস সামাদ আজাদ, জোড়াপুকুরিয়ার আসাদুল, আলতাফ, জোড়াদহের সিরাজ উদ্দীনের ছেলে এনজিওর আদালে সমিতি খুলে দাদন ব্যবসা চালাচ্ছে আলতাফ হোসেন, একই গ্রামে আবু মোল¬াহ, রফিকুল ইসলাম, বাকচুয়ার জহুরুলসহ অর্ধশত সুদখোর এই জঘন্য ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ সব ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সুদখোরদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো সুজন জানান, সুদাসল দু‘ই প্রদান করা হয়, তারপরও ঋনের টাকা পরিশোধ হয় না। পাওনা থাকে বছরের পর বছর। তিনি আরো জানান, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়া সুদের খেসারত দিতে গিয়ে গ্রাহকের হারাতে হয় বসত ভিটা, সুখের সংসার, নয়তো গোয়ালের গরু। শেষ সম্বল বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়। আর এভাবেই দিনের পর দিন কাবলিওয়ালাদের মতো সুদখোরদের অত্যাচার চলছে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
শাখেরীদহ বাজারেও এমন ভয়ংকর সুদ ভিত্তিক ব্যবসা চলছে। সেখানে বহু মানুষ সুদাসল দিয়ে ঋন শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হরিণাকুন্ডু উপজেলার শিতলী গ্রামের মতুরেশ কুমার পাচ বছর আগে সুদখোর আব্দুস সামাদ আজাদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকার ঋন নেন। লাভসহ তাকে ৫৩ হাজার টাকা প্রদান করার পরও আরো ৩১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। হাজী আরশাদ আলী ডিগ্রী কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ডাবলু মিয়া আব্দুস সামাদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে আসল ও লাভসহ ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। জোড়াদহ বাজারে মন্টু মোল্লার ছেলে আলতাফ হোসেন চাল ব্যবসার আড়ালে দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একই এলাকার সিরাজুদ্দীনের ছেলে আলতাফ হোসেনও এই কারেন্ট সুদে টাকা লগ্নি করে রাতারাতি বড় লোক হয়েছেন বলে এলাকাবাসি জানায়।
এ বিষয়ে হরিণাকুন্ডুর জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা পলাশ জানান, তার ইউনিয়নে আগে সুদখোরদের প্রভাব ছিল এখন অনেকটাই কম। তিনি বলেন এলাকার কিছু মানুষ সুদখোরদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তারা ঘরে ফিরতে পারছে না। পুলিশের সহায়তার এ সব সুদখোররা গ্রামে গ্রামে অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, সুদখোরদের সামিাজিক ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য কেও যদি আইনী সহায়তা চান তবে তাকে দেওয়া হবে।
ঝিনাইদহের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ৩নং দিগনগর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে মাঠে নেমেছেন।
এরা হলেন মোঃ শামসুজ্জামান পান্না খান, বর্তমান চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজাম, আ,ব,ম নাসিরুল ইসলাম খান, জিল্লুর রহমান তপন ও মোঃ ইদ্রিস আলী বিশ্বাস। আগামী ৪ জুন শৈলকুপা উপজেলার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারে প্রথমবারের মত ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হতে যাচ্ছে।
এ কারনে নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই ৫ প্রার্থী। তবে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে এলাকার নানাবিধ অভিযোগ। দেবতলা গ্রামের শামসুজ্জামান পান্না খান ১৯৭৩ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির কুড়েঘর প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। এরপর ১৯৭৭ সালে বিএনপি পেতে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি জাসদে যোগদান করেন। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে আবার পুনরায় বিএনপিতে ফরে এসে থানা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদ দখল করেন। ১৯৯২ সালে ভোট জবর দখল করে বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শুরু করেন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব।
যা ২০০২-০৩-০৪ সালে সংসদ অধিবেশনে শৈলকুপা সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বক্তব্য রেখেছিলেন যার রেকর্ড রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গেলে নিজের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে গোপনে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি নৌকা প্রতীক পেতে এখন উঠে পড়ে লেগেছেন। এছাড়াও নৌকা প্রতীক পেতে মাঠে নেমেছেন দেবতলা গ্রামের নাসির উদ্দিন খান। তিনি ১৯৮০ সালে খুলনা বিএল কলেজের ছাত্রলীগের সদস্য পদে ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও শৈলকুপা উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ১৯৯৬ সালে শৈলকুপা উপজেলার যুবলীগের আহবায়ক হিসাবে প্রায় ১৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি রাজনীতি জীবনে বর্তমান শৈলকুপা সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের কাছে মানুষ হিসাবে পরিচিত । বর্তমান চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজাম সারাজীবন জাসদ দলের রাজনীতি করে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা ছিল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি জীবনের নিরাপত্তা ভেবে আব্দুল হাইয়ের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
আরেক প্রার্থী মোঃ জিল¬ুুর রহমান তপন সেটেলমেন্ট অফিসে আমিনের চাকুরী করতেন। গত ইউনিয়ন নির্বাচনের সময় চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। আরেক প্রার্থী ইদ্রীস আলী জাতীয় পার্টি করতেন। তার মামা আব্দুল হাই এমপি হওয়ার পরে এবারের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভ করে নৌকা প্রতীক পেতে আগ্রহী।
ঝিনাইদহে পুস্তক বিক্রেতা সমিতির মুখে কালো কাপড় বেধে মানববন্ধন ও দোকান ধর্মঘট
ঝিনাইদহের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ২০১৬ সালে প্রনীত শিক্ষা আইনের কতিপয় ধারা উপধারা সংশোধনের দাবীতে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে তারা রোববার ঝিনাইদহ শহরে মুখে কালো কাপড় বেধে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে। দুপুর ১২টার দিকে জেলার ৬ উপজেলা থেকে কয়েক’শ পুস্তক বিক্রেতা ঝিনাইদহ শহরের লাইব্রেরি পট্রিতে জমায়েত হয়। সেখানে তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে। মানববন্ধন শেষে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব আলী ভুইয়া, আব্দুল মালেক সরকার ও হাবিবুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে বক্তগন বলেন, শিক্ষা আইন ২০১৬ এর কয়েকটি ধারা উপধারা সংশোধন করা না হলে তারা বৃহত্তর কর্মসুচি গ্রহন করতে বাধ্য হবে। ঝিনাইদহ জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে রোববার দিন ব্যাপী জেলার ৬টি উপজেলার লাইব্রেরিতে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
||আপডেট: ০৬:০৪ অপরাহ্ন, ১০ এপ্রিল ২০১৬, রোববার
চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর