প্রিয়জনের অভিমান ভাঙাতে তাজা গাঁদা ফুলের সন্ধান চাইলে ঘুরে আসা যেতে পারে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা হাইস্কুল মাঠে।
এখানে সারা বছর বিকাল বেলা গাঁদা ফুলের বিশাল পাইকারির হাট বসে।
মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুলের ঝোপা দেখে দূর থেকে মনে হয় সবুজ মাঠে যেন কোন মহামান্যকে সংবর্ধনা দেবার জন্য হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে।
কালীগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফুল চাষীরা বালিয়াডাঙ্গা স্কুল মাঠে ফুল বিক্রি করতে আসে।
প্রতিদিন এই ফুল হাটে ২/৩ লাখ টাকার ফুল ক্রয় বিক্রয় হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হাট থেকে ফুল কিনে ঢাকা ও চট্রগ্রামে এ ফুল সরবরাহ করেন।
প্রায় ১০ বছর আগে শুরু হওয়া বালিয়াডাঙ্গা ফুলের হাট এখন বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এই ফুল হাটে প্রতিদিন প্রায় ২/৩ লক্ষ টাকার ফুল ক্রয়-বিক্রয় হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষীদের হাটে আনা ফুল ক্রয় করে ঢাকা ও চট্রগ্রামে বিক্রয় করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার তিল্লা গ্রামের ফুল চাষী অধীর বিশ্বাস জানান, তার ২ বিঘা জমিতে ফুল আছে। তিনি এক দিন অন্তর একদিন ২০/২৫ ঝোপা ফুল হাটে নিয়ে আসেন। তিনি বানিজ্যিক ভিত্তিতে এ ফুলের চাষ করেছেন।
একই গ্রামের সুরুজ মিয়া জানান, তার প্রায় ৪ বিঘা জমিতে ফুল চাষ রয়েছে। তিনিও প্রতিদিন ২০/২৫ ঝোপা ফুল বিক্রি করেন। এর পরই তার সংসার ভালো ভাবে চলছে।
ফুলের হাটে কোনো চাঁদাবাজি হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ফুল চাষীরা জানান, নিজেদের এলাকায় হাট হওয়াতে এখানে কেউ এ ধরণের সাহস পায় না।
ফুল ব্যবসায়ী শওকত মির্জা ও মন্টু জানান, বালিয়াডাঙ্গার এই ফুল হাটে ত্রিলোচনপুর, তিল্লা, দাদপুর, ঘিঘাটি, বালিয়াডাঙ্গা, কালূকালী, দুলাল মুন্দিয়া, শিশের কুড় থেকে ফুল চাষীরা ফুল বিক্রি করতে আসে।
তারা জানান, ন্যার্য মূল্য পাওয়ায় চাষীরা ফুল বিক্রয় করতে এখানেই আসে।
ব্যবসায়ী শওকত মির্জা বলেন, ফুলের স্বাভাবিক দর ঝোপা প্রতি ৮০/৯০ টাকা থাকে। তবে বছরের দু’এক মাস ফুলের দাম ঝোপা প্রতি ৫’শ টাকাও হয়।
ট্রেনে কাটা পড়ে পা হারানো আব্দুর রাজ্জাক মন্টু জানান, নিজ গ্রামে ফুলের হাট হওয়ায় এখন আর আগের মতো পরিশ্রস করতে হয় না তাকে।
বর্তমানে ফুলের ব্যবসা করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখন আর নিজেকে আগের মতো অসহায় মনে হয় না বলে জানান তিনি।এক সময়ে রাজ্জাকের সংসারে ছিল অনেক অভাব, কিন্তু গত ক,বছর ধরে ফুলের চাষ করে তার সংসারের অবস্থা অনেক স্বচ্ছল।
ফুল চাষীরা আরো জানান, এলাকায় ফুলের হাট হওয়ায় অনেক বেকার যুবক এখন ফুল চাষ ও ফুলের ব্যবসা শুরু করেছে।
তারা আশা করেন ফুলের হাটটি স্থায়ীভাবে থাকলে এই অঞ্চলের বেকার যুবকেরা ফুলচাষ ও ফুল ব্যবসায় নেমে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপনের সুযোগ পাবে।
এলাকার অধিকাংশ মানুষ গত কয়েক বছর ধরে অন্য ফসলের চাষ বাদ রেখে তারা অধিক লাভের আশায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ করে থাকে।