প্রথম দিনেই নজর কাড়লেন ফরিদগঞ্জের জয়

ওপেনার সাদমান ইসলামের সঙ্গে শুরুতেই পাশাপাশি নেটে ব্যাটিং পেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। স্পিন বল মোকাবেলা করে গেলেন আরেক নেটে থ্রো ডাউনে ব্যাট করতে। মাঝে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। দিনের শেষভাগে ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্সের সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করতে দেখা গেল তাকে। কুড়ালেন প্রশংসাও।

এমনিতে আঁটসাঁট টেকনিকের ব্যাটসম্যান জয়। আছে লম্বা ইনিংস খেলার টেম্পারমেন্ট। ইনিংস তৈরি করতে পারার সহজাত ক্ষমতাও আছে। তবে টেস্ট দলে একটু তাড়াতাড়ি ডাক পেয়ে গেলেন কিনা এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন ছিল।

কিন্তু দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্তত প্রথম দিনে তাকে মনে হলো বেশ সপ্রতিভ। স্পিন বলে পায়ের কাজ ছিল জুতসই, পেসাদের বিপক্ষে ক্রিজের ব্যাবহার করতে দেখা গেছে তাকে। নেটের শেষ দিকে এই তরুণকে আলাদা ডেকে কাজ করলেন প্রিন্স।

কোন বল ছাড়তে হবে, কোন বলে করতে হবে প্রান্ত বদল। কোচের তালিম বুঝে নিঁখুতভাবে তা অনুসরণ করে যাচ্ছিলেন জয়। এই তরুণের আত্মবিশ্বাস মন কাড়ল প্রিন্সেরও। বেশ কয়েকবার বললেন- ‘ওয়েলডান’, ‘পারফেক্ট’। দলের নিয়মিত ওপেনার সাইফ হাসানের আগে নেটে ব্যাটিং পেয়েছেন, যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি করেছেন কোচদের। এমনিতে ওপেনার নন। খেলেন মিডল অর্ডারে। টেস্ট দলে ওপেনারদের ব্যাকআপ না থাকায় তাকে সেই জায়গায় বিবেচনা করার একটা আভাস মিলছে।

চাঁদপুরের ছেলে জয় প্রথম আলোয় যুব বিশ্বকাপে। গত যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে করেন ম্যাচ জেতানো দারুণ সেঞ্চুরি।

এরপরে ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন ধাপেও রাখেন উন্নতির ছাপ। এবারের জাতীয় লিগে খেলেছেন ৪ ম্যাচ। তাতে দুই সেঞ্চুরি ও একটি ৮৩ রানের ইনিংস তার। শেষ রাউন্ডে ৮৩ রানের ইনিংস খেলার পরই ডাক পড়ে জাতীয় দলে। একদিন আগেই জাতীয় লিগ ছেড়ে যোগ দেন জাতীয় দলের স্কোয়াডে।

অনুশীলনে নামার আগে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন একুশ পেরুনো এই ডানহাতি ব্যাটার, ‘আসলে এই অনুভূতিটা প্রকাশ করার মতো না। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়ার। আমি প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি। আমি অনেক খুশি।’

‘হ্যাঁ! জাতীয় লিগে বেশ কয়েকটি ইনিংস ভালো খেলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস এখন ভালো আছে। তার আগে এইচপি ও এ টিমের প্রস্তুতি ম্যাচেও আমি ভালো একটা ইনিংস খেলেছি। তাই আমি প্রস্তুত আছি, সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার জন্য।’

মাহমুদুল হাসান জয়

মাহমুদুল হাসান জয়ের গল্পটা তার যুব দলের অনেক সতীর্থের সঙ্গেই মিলে যায়। বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলতে যেতে হতো তাকে। কিন্তু মাঠে গিয়ে ব্যাটিং না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতেন তিনি। জিদটা পুষে রেখেছিলেন যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০ রানের ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে তোলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জন্ম নেয়া মাহমুদুলের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেখে বাবা ব্যাংকার আবুল বারেক তাকে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করান। চাঁদপুরের এই একাডেমিতে দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৪ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন মাহমুদুল। ছেলেকে নিজের মতো ব্যাংকার বানানোর স্বপ্ন ছেড়ে বাবা আবুল বারেকও সব ধরনের সমর্থন দিতে থাকেন। এরপর কেবল এগিয়ে যাওয়ার গল্পই লিখেছেন মাহমুদুল।

টেস্ট দলে ডাক পেয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই জয়ের, ‘আসলে এই অনুভূতিটা প্রকাশ করার মতো না। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট স্কোয়াডে চান্স পাওয়ার। আমি প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি। আমি অনেক খুশি। কিভাবে কী করবো, সেটি নিয়ে আলাদা কোন পরিকল্পনা নেই। সুযোগ পেলে আমি আমার স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করবো।’

জাতীয় ক্রিকেট লিগে দারুণ সময় কেটেছে জয়ের, তিন ম্যাচেই করেছেন ৩৪৫ রান। জাতীয় লিগের দূর্দান্ত পারফরম্যান্সে আত্মবিশ্বাসী তরুণ এই ব্যাটসম্যান, ‘জাতীয় লিগে বেশ কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস এখন ভালো আছে। তার আগে এইচপি ও ‘এ’ দলের প্রস্তুতি ম্যাচেও আমি ভালো একটা ইনিংস খেলেছি। তাই আমি প্রস্তুত আছি, সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার জন্য।’

অনুশীলনে দলের সবার কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন জয়। তার ভাষায়, ‘সিনিয়র ভাইরা সবাই আছেন, সবাই সাহায্য করলে… আমরা একসাথে শেষ কয়েকটা সিরিজ খেলছি। সবাই অনেক সাহায্য করে আমাকে, ভালো কিছুর আশায় আছি।’

স্টাফ করেসপন্ডেট

Share