ভাঙা কব্জিতে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থাতেই এক হাতে তামিমের ব্যাট করতে নেমে পড়াটা বিশ্বব্যাপী বেশ সমাদৃত হয়েছে। দেশ কিংবা দেশের বাইরের ক্রীড়াপ্রেমীরা অভিভূত হয়েছেন তামিমের এমন সিদ্ধান্তে, প্রশংসা করেছেন তার সাহসিকতার। এক হাতে ব্যাট করতে নেমে পড়ার আগে কি ভাবছিলেন তামিম? কি চলছিল তার মনে? পরিকল্পনাই বা কি ছিল?
এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো সবার মনে। দলীয় সুত্র জানা গিয়েছিল অল্প বিস্তর। পরিকল্পনা ছিল যদি নবম উইকেট পতনের পরে মুশফিকুর রহীম স্ট্রাইকে থাকেন তাহলে ভাঙা কবজি নিয়েই নেমে যাবেন তামিম ইকবাল। কিন্তু ৪৭তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান রানআউট হওয়ার সময় দেখা গেল নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে মুশফিক।
তখনো সে ওভারের বাকি একটি বল। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ অবস্থায় নামার কথা নয় তামিমের। চলে আসার কথা মুশফিকের। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নেমে পড়েন তামিম। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল তামিমের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তই ছিল মাঠে নেমে এক বল খেলে দেয়া। পরে জানা গেল এর বিস্তারিত বর্ণনা।
জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন ক্রিকইনফো’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে বিশদ জানিয়েছেন তামিম। সেখান থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হলো জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য:
‘আমি ওই ১০ সেকেন্ডে (বোলার দৌড়ে আসার সময়) সাহস পাচ্ছিলাম। মাঠে নামার সময় দর্শকদের প্রতিটি চিৎকার আমাকে সাহস যোগাচ্ছিল। আমি হয়তো আউট হয়ে যেতে পারতাম বা যেকোনো কিছুই হতে পারতো, তবে ওই মুহূর্তে আমি দল এবং দেশের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম।’
‘এখন মনে হচ্ছে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কাজটা। আঘাতপ্রাপ্ত হাতটা আমার পেছনে ছিল, যদি খেয়াল করে থাকেন শট খেলার সময় হাত সামনে চলে এসেছিল আর বলটি মিস করলেই আমার ওই হাতেই আবার লাগতো।’
‘রুবেল যখন ক্রিজে ছিল আমি তখন প্যাড আপ করা শুরু করি। মাশরাফি ভাই আমার গ্লাভস কেটে দেন। জীবনে প্রথম অন্য কেউ আমাকে গার্ড পরিয়ে দিয়েছে! মুমিনুল এবং অন্যরা আমাকে প্যাড পরতে সাহায্য করে। সবাই আমাকে তখন দারুণ সহায়তা করছিল, সাহস দিচ্ছিলো।’
‘যখন মুস্তাফিজ আউট হলো, তখন পর্যন্তও নিশ্চিত ছিলাম না নামবো কিনা। আমি কিছু চিন্তা না করেই নেমে পড়েছিলাম। আমাকে জিগেস করা হয়েছিল আমি নিশ্চিত কিনা, আমি দ্বিধাহীন ছিলাম।’
‘এই এশিয়া কাপ নিয়ে আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আমি ওই মুহূর্তে আবেগের বশেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যদি আমি এক বল খেললে দল আরো ৫ কিংবা ১০ রান করতে পারে এবং সেটা দলের উপকারে আসে, তাহলে কেন নয়? কেউ হয়তো আশা করেনি যে আমি ১ বল খেললে অপর প্রান্ত থেকে ৩২ রান আসবে। মুশফিক অসাধারণভাবে শেষ দিকটা সামলেছে।’
‘আমার মনে হয় না আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে। এখন আমি সবার প্রতিক্রিয়া দেখছি, কিন্তু আমি যখন ব্যাট করতে নামছিলাম এসব কোন কিছুই তখন আমার মাথায় ছিলনা। আমি শুধু আমার দল এবং দেশের কথা ভেবে নেমেছিলাম।’
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur