গরু কিংবা খাসির মাংস খেতে কারও আপত্তি থাকলেও ছোট-বড় সবার প্রিয় বাগদা-গলদা চিংড়ির যে কোন পদ। চিংড়ি মাছের মালাই কারি, চিংড়ি ফ্রাই, চিংড়ি ভুনা, বারবিকিউ প্রোন, হট সসি প্রোন এর যে কোন একটি হলে তো কথাই থাকে না।
গলদা চিংড়ি ও লম্বা বেগুনের ভুনা একবার খেলে অনেকক্ষণ আঙুল চাটতে হয়। গলদা চিংড়ির লম্বা লম্বা পায়ের ভেতরের অস্থিমজ্জা মসলা দিয়ে মেখে ডুবো তেলে ভেজে খেলে জিহ্বায় স্বাদ লেগে থাকে দীর্ঘ সময়।
গলদা ও বাগদা চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ করে ঢাকার সাভার, সদর ঘাট, কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, সিলেট, পটুয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে গোপনে পিকআপ ও ট্রাকে করে বিভিন্ন মৎস্য আড়ত ও মাছ কোম্পানিতে পুশ করা চিংড়ি বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রচলিত আছে, গলদা চিংড়ির মাথার ভূনা ও ঘিলু রান্না দিয়ে ভাত খেলে নাকি কৃষকের সংসারে বছরে এক মণ চাল বেশী লাগতো। খুলনাঞ্চলে কেউ বেড়াতে এলে বিশেষ আইটেম হিসেবে দেওয়া হতো গলদা চিংড়ির ভুনা। এক সময় কেউ কেউ সরিষা বাটা ও ডালের বেসন দিয়ে মেখে ডুবো তেলে ভেজে অতিথি আপ্যায়ন করতো গলদা চিংড়ি দিয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে জামাইয়ের সামনে পরিবেশন করা হতো বড় বড় গলদা চিংড়ি। মেহমানদের আপ্যায়নেও গলদা চিংড়ি রাখা হতো। তারা অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে এই গলদা চিংড়ি খেতেন আর প্রশংসা করতেন।
কিন্তু কালের বিবর্তনে চিংড়ি এখন অভিজাত ব্যক্তির প্লেটে সৌখিন খাবারের রূপ নিয়েছে। রেস্টুরেন্ট ও হোটেলগুলোর দামি খাবারের তালিকায় চলে গেছে। আর এই সুযোগে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে ওজন বাড়াচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। দেশের ৭০ ভাগ চিংড়ি খুলনাঞ্চল থেকে রপ্তানি হলেও দিন দিন নানা সঙ্কটে এর রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। পুশকৃত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করায় বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশি চিংড়ির ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে। যা রপ্তানিতে প্রভাব পড়ছে। বিদেশের বাজার হারিয়ে এই চিংড়ি এখন কম দামে দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। স্বাদে ভরপুর চিংড়ি খাওয়ার আশায় এসব পুশকৃত চিংড়ি বাজার থেকে অনেকেই না বুঝে কিনছেন। আর এসব চিংড়ি খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন।
অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় চিংড়ির দেহে সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, লোহা বা সীসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন ধরনের পদার্থ মেশাচ্ছেন। এর মধ্যে জেলি, সাগু, পাউডার ও সাদা লোহা জাতীয় দ্রব্য গলদা চিংড়িতে বেশি পুশ করা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে ওজন বাড়াতে চিংড়ি পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।
পুশকৃত চিংড়ি বোঝার উপায় সম্পর্কে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ খুলনার উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার বলেন, স্বাভাবিক চিংড়ির হাত-পা কুঁকড়ে থাকে, কিন্তু পুশকৃত চিংড়ির হাত-পা ছড়িয়ে থাকে। বাইরে থেকে পুশকৃত চিংড়ি দেখতে একটু মোটা হয়, চিংড়ির গায়ে একটা টনটন ভাব থাকে। এছাড়া চিংড়ির মাথা ভেঙ্গে দেহের অংশে চাপ দিলে পুশকৃত চিংড়ি থেকে পানি বেরিয়ে আসে, জেলি পুশ করা চিংড়ি থেকে একটা পিচ্ছিল পদার্থ বেরিয়ে আসে। আমরা সাধারণত যেটা করি, চিংড়ির পেছনের নালীর বরাবর কলম বা চাবি দিয়ে কেটে ফেলি, তারপর দেহের অংশে চাপ দিলে পানি পুশ বা জেলি পুশ যাই থাকে সেটা বেরিয়ে আসে। পানি পুশ হলে পিচ্ছিল পানি বেড়িয়ে আসে। জেলি পুশ হলে পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। আজকাল আগার জাতীয় জেলি পুশে ব্যবহার করা হচ্ছে। চিংড়িতে আগার পুশ করলে সেটা ভেতরে গিয়ে চিংড়ির মাংসের মতো শক্ত হয়ে থাকে। মাথা ভেঙ্গে দেহের অংশে চাপ দিলে একটা শক্ত সুতার মতো পদার্থ বেরিয়ে আসে।
জনসাধারণের প্রতি পরামর্শ দিয়ে প্রফুল্ল কুমার বলেন, জনসাধারণের উচিত চিংড়ি কিনতে গেলে মাথা ভেঙ্গে দেখা। চিংড়ির মাথা ভেঙ্গে মাথা ও দেহে উভয় অংশ চাপ দিলে পানিপুশকৃত চিংড়ি থেকে পানি বেরিয়ে আসবে, জেলিপুশ করা চিংড়ি থেকে একটা পিচ্ছিল পদার্থ বেরিয়ে আসবে। যা হাতে নিলে পিচ্ছিল মনে হবে। শক্ত কিছু পুশ হলে সুতার মতো বেড়িয়ে আসবে।
লনা সিভিল সার্জন এস এম আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, চিংড়িতে মেশানো অপদ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পুশ চিংড়ি খেলে লিভার, কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। (বাংলানিউজ)
ভিডিওতে দেখুন-
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২: ১৩ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ