চলমান কোটা সংস্কারের আন্দোলন ইস্যুতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে (মুনিরা বভনে) ভাংচুর, লুটপাটে এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে মূল ভবনের ভেতরের ব্যবহার্য আসবাবপত্র, ফার্নিচার, টিভি, ফ্ইরিজ, এসিসহ ব্যবহার্য সব ইলেকট্রনিক সামগ্রী পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে।
গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে দমকল বাহিনীর উপস্থিতিতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় মুনিরা ভবন থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে থাকা পার্শ্ববর্তী যমুনা ওয়েল এর জ্বালানী তেলের ডিপোটি। যেখানে হাজার হাজার লিটার জ্বালানি তেলে সংরক্ষিত ছিল। যেখানে সামান্য আগুনের স্পর্শ লাগা মাত্রই পুরো তেলের ডিপোটি বিস্ফোরিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারত।
এদিকে এই ঘটনাকে চলমান কোটা সংস্কারের আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি নেতৃবৃন্দরা।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর শহরের বাস স্টেশন ও কালিবাড়ি এলাকায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষ চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রাত ৯টার পর সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির কার্যালয় এবং বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা চালায়। পরিকল্পিত এ হামলার অংশ হিসেবে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে (মুনিরা বভনে) পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি পাশ্ববর্তী বিএডিসি ভবনও। তারা সরকারি এ ভবনের গেট এবং জানালা ভাংচুর করেছে।
এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়ে সকলে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা তাৎক্ষণিক উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এই নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
চাঁদপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন মাঝি বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয়রা দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাট করেছে। উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে ইব্রাহিম কাজী জুয়েলের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর এবং তার ভাইদের আহত করা হয়েছে। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান আকাশের উপর হামলা করে তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল গাজী বাজারের বাড়িতে হামলাসহ অসংখ্য ছাত্র নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর করা হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের জেলা বিএনপির কার্যালয় এবং জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সাহেবের বাসভবন (মুনিরা বভনে) ভাঙচুর করেছে। এরপর তারা শহরের কালীবাড়ি চলে যায়।
আক্তার হোসেন মাঝি আরো বলেন, তারা পূণরায় কালীবাড়ি থেকে এসে পেট্রল ঢেলে আমাদের জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সাহেবের বাসভবন (মুনিরা বভনে) আগুনে পুড়িয়ে দেয়। আগুন দেয়ার আগে তারা বাড়ির ভেতরের ব্যবহার্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। এমনকি সিসি ক্যামেরায় ডিভাইসটিও তারা নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে আমরা শুনতে পেরেছি ওই সময়ে এখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল। প্রশাসনের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, কোটা বিরোধী আন্দোলন ছাত্ররা করেছে। বৃহস্পতিবার তো আমাদের রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি ছিল না। তাহলে কেন আমাদের জেলা বিএনপির সভাপতিসহ অন্যান্য নেতাদের বাড়িতে এই হামলা চালানো হলো। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসনের কাছে আমরা এই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষ সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ সময় চাঁদপুর জেলা বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন খান বাবুল, মুনির চৌধুরী, শরিফ উদ্দিন পলাশ, ডিএম শাজাহান, স্বেচ্ছাসেবক দলের হযরত আলী ঢালী ও কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জুয়েলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার, ২৪ জুলাই ২০২৪