চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন প্রথম সারির যোদ্ধারা। করোনা সচেতনতা, চিকিৎসা ও সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় দায়িত্বরতদের মধ্যে চিকিৎসক, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যু বরণ করেছেন।
জানা যায়, সারাবিশ্বে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকির শুরু হতেই শাহরাস্তি থানা পুলিশ, হাসপাতালের চিকিৎসক ও বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং একমাত্র পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ পৌঁছানো, লাশ দাফন, আক্রান্ত ও সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসা, হোম কোয়ারেন্টাইন, হোম আইসোলেশন ও লকডাউন নিশ্চিতকরনে নিরলস কাজ করে আসছেন। গত ৫ মে উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এসব যোদ্ধারা মনোবল না হারিয়ে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে মানুষের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ইতোমধ্যে উপজেলায় কারোনায় আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
৯ জুন মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার সময় গুরতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সফি আহম্মেদ মিন্টু (৬৯)। মৃত্যুর দুই দিন পর আসা নমুনার ফলাফলে জানা যায়, তার করোনা পজেটিভ ছিল। তার মৃত্যুর পর জানাজায় যাওয়া পুলিশ, পরিবার ও বাড়ির লোকজনের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।
রোববার দুপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজের বাড়িতে মারা গেছেন পৌর কমিউনিটি পুলিশের সহ-সভাপতি হাজী আনোয়ার হোসেন নূর (৫৫)। শাহরাস্তিতে তিনিই প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা গেছেন। এর আগে যারা করোনায় মারা গেছেন তাদের মৃত্যুর পর করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছিল। ওইদিন বিকেল ৪টায় শাহরাস্তি উপজেলা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকার লোকজন জানান, হাসপাতালে নেয়ার দুই ঘণ্টা আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ভয়ে কেউ এগিয়ে না যাওয়ায় দুই ঘণ্টা তার লাশ বিছানায় পড়ে ছিল। এছাড়াও করোনায় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন নুরিংপুর এলাকার মোঃ মকবুল হোসেন, পৌর শহরের আব্দুস ছালাম, সাহাপুর গ্রামের অফিস সহকারী মোঃ মনিরুজ্জামান, সাহেব বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল করিম।
তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে ২২ জুন নমুনা পরীক্ষার জন্য দেন। গত ২৪ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে তার করোনা পজেটিভ বলে জানানো হয়। হোম আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় রোববার দুপুরে তার দেহ নিথর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের লোকজন প্রতিবেশী ও প্রশাসনকে খবর দেন। বিকেল ৪টায় অ্যাম্বুলেন্স যোগে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
গত ৮ জুন রাতে রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে মারা যান টামটা উত্তর ইউনিয়নের দৈলবাড়ি গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আঃ মোমেন। ১০ জুন তার নমুনা পজেটিভ আসে। তিনি সরকারী চাকরি থেকে অবসরে এসে নিজ গ্রামে গরীব ও অসহায়দের চিকিৎসাসেবা দিতেন।
আক্রান্ত চিকিৎসকরা
করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গহীন রোগীদের সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন চিকিৎসক, একজন স্যাকমো, একজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী একজন অফিস সহায়ক ও একজন কর্মচারী। এছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকজন বেসরকারি চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা হলেন শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রতীক সেন (বর্তমানে সুস্থ্য), মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আয়েশা সিদ্দিকা, ডাঃ মেহেদী বাসার, স্যাকমো মোঃ আবু সুফিয়ান, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোপীনাথ সাহা, স্বাস্থ্য সহকারী কামরুন্নাহার, মোঃ আবুল বাশার, অফিস সহায়ক মোঃ তাজুল ইসলাম ও কর্মচারী দীলিপ দেবনাথ। এছাড়া বেসরকারি দন্ত চিকিৎসক ডাঃ এ কে মজুমদার পলাশ, গ্রাম্য চিকিৎসক ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।
আক্রান্ত পুলিশ
করোনায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শাহরাস্তি থানার তিন পুলিশ আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন সহকারী উপ-পরিদর্শক সৈকত দাস গুপ্ত, শেখ কামাল হোসেন (সুস্থ্য) ও কনস্টেবল জরিনা আক্তার (সুস্থ্য)।
আক্রান্ত জনপ্রতিনিধিরা
করোনায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ওমর ফারুক দর্জি, টামটা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জহিরুল আলম ভুঁইয়া মানিক, রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম পাটোয়ারী লিটন, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ বাহার উদ্দিন বাহার ও সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের মেম্বার কবির আহম্মেদ।
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সম্মুখ সারির এসব যোদ্ধারাসহ শাহরাস্তি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৭ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
প্রতিবেদক:মো.জামাল হোসেন,৩০ জুন ২০২০