জেলখানা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আল কায়েদা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

ঈদুল ফিতরের পর রাজধানীতে বড় ধরনের পরিকল্পনা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের একিউআইএসের শাখার (আল কায়েদা ও আইএস)। পরিকল্পনায় ছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামী মাইনুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে ছাড়িয়ে আনতে জেলখানা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা। সফল হতে পারলে এক সাথে সারাদেশে হামলার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।

রাজধানীর র‌্যাব সদর দফতরে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও সাবেক হুজি নেতা মুফতি মাইনুল ইসলাম এবং একিউআইএসের উপদেষ্টা মাওলানা জাফর আমিনসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরই এ সব তথ্য বেরিয়ে আসে।

মুফতি মাহমুদ বলেন, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি প্রদেশ ও দেশ নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করাই তাদের পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তারা আল কায়েদা ও আইএসের শাখা একিউআইএসের কার্যক্রম বাংলাদেশেও শুরু করে। ঈদের পর রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর জন্য বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য ঢাকায় জড়ো হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তারা রাজধানীর মিরপুরে একটি বাসাও ভাড়া নেয়। সেই বাসায় বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য মিলিত হতে বরিশাল ও খুলনা থেকে রওয়ানা দেয় বলে র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগে খবর আসে।

তিনি আরও বলেন, এ তথ্যের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৪ বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে রাজধানীর সদরঘাট থেকে একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিম ওরফে নানা ওরফে বদিউল (৩৫), উপদেষ্টা মুফতি জাফর আমিন ওরফে সালমান (৩৪), সক্রিয় সদস্য মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম (২০), মো. মোশাররফ হোসেন (১৯) ও আব্দুল রহমান বেপারীকে (২৫) আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সক্রিয় সদস্য আল আমিন ওরফে ইব্রাহিম (২৮), মোজাহিদুল ইসলাম (৩১), আশরাফুল ইসলাম (২০), রবিউল ইসলাম (২৮) ও মো. হাবিব উল্লাহকে (২৬) আটক করা হয় এবং মিরপুর-১-এর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৮ নম্বর বর্ধনবাড়ির ভাড়া করা বাসায় অবস্থানরত মো. শহিদুল ইসলাম (১২) ও আলতাফ হোসেনকে (২৬) আটক করা হয়।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, আটকদের কাছ থেকে সালফার এসিড, গন্ধক, সালফিউরিক এসিড, পটাশিয়াম এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য, বিস্ফোরক ডিভাইস, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ছুরিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্রাস্ত্র, জিহাদী বই, মোবাইল ফোনসেট ও ব্যাংকের চেক উদ্ধার করা হয়। তারা আল কায়েদার প্রধানের ভিডিও বার্তা ও আইএস জঙ্গিদের কার্যক্রম দেখে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছিল।

তিনি আরও বলেন, মাওলানা মুফতি মাইনুদ্দিন ওরফে আবুল জান্দাল ব্রিটিশ হাইকমিশনের ওপর হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। তিনি জেলহাজতে থেকে মোবাইল ও চিঠির মাধ্যমে জেলের বাইরে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংগঠনটির নাম ‘দাওয়াতে তবলীগ’ এবং পরে ‘৩১৩ বদরের সৈনিক’ নামে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালায়। তিন স্তরে কাজও শুরু করেছে দাওয়াতে তবলীগ। তারা ঢাকার বাইরে ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করে। এ জন্য বগুড়ায় একটি মাদ্রাসার মাঠও নির্ধারণ করেছিল।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ৩১৩ বদরের সৈনিক সংগঠনটির অর্থদাতা সৌদি আরব ও দুবাই থেকে ফিদাই মাওলা নামে ফেসবুক ব্যবহারকারী রফিক নামে এক ব্যক্তি। জাফর আমিন এই টাকা সংগঠনের কাছে পৌঁছে দিতো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রুম্মান মাহমুদ, সিনিয়র সহকারী পরিচালক মেজর মাকসুদুল আলম।

আপডেট :   বাংলাদেশ সময় : ১১:৩১ অপরাহ্ন, ১৮ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার ০২ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

 চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি

Share