টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে । বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম পর্বের প্রথম দিন ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জুমার নামাজের বৃহত্তম জামাত।
দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু হয়। নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাও.জোবায়ের।
দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের উপস্থিতিতে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির- আসকার আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখর কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগপারের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা স্থলে হাজির হন।
শুক্রবার ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২ টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটে আসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি- গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন।
জুমার নামাজের বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ এ জুমার নামাজের ইমাম হাফেজ মাও.জোবায়ের আহমেদ ‘ উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের বেলাল মসজিদ’র সামনে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেন।
জুম্মার নামাজে শরিক হন ধর্মমন্ত্রী অ্যাড.শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো.আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার ৯ জানুযারি সকাল থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে ইজতেমা মাঠে। মেঘলা আকাশ, হালকা বৃষ্টির সঙ্গে শীতের প্রকোপ। এমন আবহাওয়া উপেক্ষা করে মানুষ জমা হতে থাকে টঙ্গীর তুরাগপাড়ে। মুসল্লিদের পদচারণে মুখর পুরো ইজতেমা ময়দান। টঙ্গীমুখী মানুষের ঢলে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ইজতেমা ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আজ প্রথম দিন।
উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে সময় কাটাচ্ছেন। তবে শীতের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুসল্লিদের প্যান্ডেলের বাইরে যেতে দেখা যায়নি।
তাবলিগ জামাতের বিবদমান বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। মাও. জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি।
২য় পর্ব শুরু ১৭ জানুয়ারি
ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার ৮ জানুয়ারি থেকেই মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পপতিবার দুপুরের আগেই পুরো ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেক মুসল্লি ময়দানে স্থান না পেয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাত এবং বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করছেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে স্মরণকালের সবচে বেশি মুসল্লি জমায়েত হয়েছেন বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার থেকেই দলে দলে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয় মানুষের ঢল। এদিন ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, দলে দলে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা।
তাদের কারও মাথায়, কারও কাঁধে আবার কারও হাতে একাধিক ব্যাগ। তারা বাস, ট্রাক, ট্রেনে করে এসেছেন ইজতেমা মাঠে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসংলগ্ন বিভিন্ন ফটক দিয়ে মাঠে প্রবেশ করছেন মুসল্লিরা।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় এসে আরও দু’মুসল্লি মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি রাতে তাদের মৃত্যু হয়। এনিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা ৩ মুসল্লি মারা গেলেন।
ইজতেমা ময়দানের কন্ট্রোল রুমে মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মনজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি রাতে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা দু’মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার পাটগ্রাম এলাকার আমির শেখের ছেলে খোকা মিয়া (৬০) রাত ৯ টার দিকে হৃদরোগে এবং মধ্যরাতে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার খৈগ্রাম এলাকার মোহাম্মদ আলী (৭০) বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। শুক্রবার বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা সম্পন্ন হয়।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকান্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে জেলা প্রশাসন। বিদেশি মেহমানগণের আবাসস্থল নির্মাণের নিমিত্তে টিন সরবরাহ,বিভিন্ন দফতরের কন্ট্রোল রুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে থাকে। সর্বোপরি বিশ্ব ইজতেমার সকল দিক জেলা প্রশাসন পর্যবেক্ষণ করে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো.আনোয়ার হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমার চারপাশ এবং বাহির সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। খিত্তায় খিত্তায় পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সাড়ে ৮ হাজার পুলিশ, নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবে। এর মধ্যে রয়েছে জেলা পুলিশ,আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন, শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, মেট্রো পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ রয়েছে। যেকোনো প্রকার নাশকতা প্রতিরোধ পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১০ জানুয়ারি ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur