চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক: আপডেট: ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
ভয়ংকর খুনী আব্দুল হাকিম ওরফে ‘বাইশ্যা ডাকাত’ (৪২)। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের খুন করে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দিতে তার কয়েক মুহুর্ত সময় লাগে মাত্র। আবার সেই খুনের ঘটনা কেউ দেখে ফেললে তাকেও বাঁচিয়ে রাখে না বাইশ্যা ডাকাত।
বঙ্গোপসাগরে ৩১ জেলে আর ১১ জেলে খুনের দু’টি ঘটনায় বাইশ্যা ডাকাতের নির্মমতার প্রমাণ মেলে। জলদস্যুসম্রাট বাইশ্যা অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার অপরাধ জীবনের কিছু কিছু তথ্য পুলিশকে দিয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে নির্বিকার বাইশ্যা ডাকাত জানতে চেয়েছে, কয়টি চ্যানেলে তার ছবি দেখানো হবে ?
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাইশ্যা ডাকাত খুবই নিষ্ঠুর এবং ধূর্ত প্রকৃতির। সে প্রমাণ রেখে কখনও খুন করে না। তুচ্ছ বিষয়ে জেলেদের খুন করে লাশ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে তার হাত কাঁপে না।
সোমবার রাতে বাইশ্যা ডাকাতকে বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুদুকখালী গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি জানান, ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় একবার বাইশ্যা ডাকাত গ্রেপ্তার হয়েছিল। ওইসময় সে ১১ মাস জেল খাটে। ২০১০ সালে সে অস্ত্রসহ খুদুকখালীতে গ্রেপ্তার হয়। তবে কয়েক মাস পর সে জামিনে বেরিয়ে আসে।
২০১৩ সালের ২ এপ্রিল বাইশ্যা ডাকাত ও তার বাহিনী মিলে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানার জাহাজখালী এলাকায় গভীর সমুদ্রে ৩১ জেলেকে নির্মমভাবে খুন করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। ২৭ সেপ্টেম্বর কোস্টগার্ড সদস্যরা তার বাড়ি ঘেরাও করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। সে পালিয়ে যাবার সময় সুফি আলম নামে কোস্টগার্ডের এক সোর্সকে হত্যা করে।
তার বিরুদ্ধে ৩১ জেলে ও ১১ জেলে হত্যা সহ বাঁশখালীতে ১২টি ও কক্সবাজারে ৪টিসহ মোট ১৬টি মামলা আছে বলে এসপি জানান।
এসপি একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, বাঁশখালী, আনোয়ারা, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকার জেলেদের কাছে বাইশ্যা ডাকাত জীবন্ত ত্রাস। তার বিশাল বাহিনী আছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে যখন জেলে কিংবা অন্যদের কোনো কাজ থাকে না তখন আয়ের জন্য তারা বাইশ্যার বাহিনীতে যোগ দেয়। তাকে গ্রেপ্তারের পর উপকূলে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (এসবি) মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান জানান, ১৯৭২ সালে জন্ম নেয়া বাইশ্যা নয়জন ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বোন দুর্ধর্ষ ডাকাত রহিমাসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ডাকাতির সঙ্গে জড়িত।
বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকায় রিফিউজী ঘোনার সরকারী খাসজমি দখল নিয়ে স্থানীয় ছিদ্দিক মাস্টার বাহিনীর সঙ্গে খুদুকখালী বাহিনীর প্রায়ই সংঘর্ষ হত। বাইশ্যা খুদুকখালী বাহিনীর হয়ে অস্ত্র চালাত। পরে ওই বাহিনীর নেতৃত্বে আসে বাইশ্যা। শুরু হয় তার একের পর এক অপরাধকর্ম। সে গড়ে তোলে বিশাল জলদস্যুবাহিনী।
তবে সাংবাদিকদের সামনে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বাইশ্যা ডাকাতির কথা অস্বীকার করে। তার দাবি, ছনুয়ায় চিংড়ি ঘোনা নিয়ে জনৈক কামাল উদ্দিন ও সৈয়দ নূরের সঙ্গে বাইশ্যা ও তার বোন রহিমার বিরোধ ছিল। কামাল উদ্দিন ও সৈয়দ নূর বিভিন্ন ডাকাতি মামলায় তাদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে।
৩১ জেলে ও ১১ জেলে হত্যার বিষয়ে বাইশ্যা বলে, ‘ওরা আসলে জেলে ছিল না। ওরা ডাকাত ছিল। ডাকাতি করে নৌকা নিয়ে পালানোর পথে তার রামগতির জেলেদের হাতে পড়ে। রামগিতর জেলেরা তাদের হত্যা করেছে।’
জেলা পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, বাইশ্যা প্রচন্ড নিষ্ঠুর আর ধূর্ত। সে একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। রিমান্ডে নিলে প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসবে।
‘স্যার, আমাকে কয় চ্যানেলে দেখাবে ?’
সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের পর জেলা পুলিশের সাতকানিয়া সার্কেলের এএসপি একেএম এমরান ভূঁইয়া এবং বাঁশখালী থানার ওসি কামরুল হাসান মিলে তাকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এএসপি একেএম এমরান ভূঁইয়া জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তাকে এসপি অফিসে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হবে জানতে পেরে বাইশ্যা জানতে চায়, ‘স্যার আমাকে কয় চ্যানেলে দেখানো হবে ?’
জবাবে এমরান ভূঁইয়া বলেন, তোমাকে দেশের সব চ্যানেলে দেখানো হবে। জবাবে বাইশ্যা ডাকাত ধন্যবাদ দেয়।
মঙ্গলবার এসপি অফিসে আনার সময় বাইশ্যা ডাকাত পুলিশ হেফাজতে অনেকটা নির্বিকার ছিলো। এক পর্যায়ে সে সাংবাদিকদের দেখে বলে, আমার বোন রহিমাকেও কোস্টগার্ড গ্রেপ্তার করেছিল। আল্লাহর রহমতে সে জামিন পেয়ে বের হয়ে গেছে। আমিও জামিনে বেরিয়ে আসব।
চাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ/২০১৫।