মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার রাতে মারা যাওয়া মোঃ জাকির হোসেন (৫৫) দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে পীর সাহেব চরমোনাই এর সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উওর উপজেলা সেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যগণ।
শনিবার সকালে টিম প্রধান আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মোঃ হাবিবুর রহমান, সহঃ টিম প্রধান ক্বারি আঃ রাজ্জাক, মাওঃ আশিকুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান, মহসিন দেওয়ান,আল ইসলাম, শাহজালাল, আল হাসান এদের নেতৃত্বে মৃত জাকির হোসেনের গোসল,জানাজা ও দাফনের কাজ সম্পন্ন করে। আজকের দাফনসহ মোট ৮জন করোনায় মারা যাওয়া মৃতদেহ দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে বলে টিম প্রধান আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মোঃ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন।
বিপদগ্রস্ত মানুষের সব দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা তখন কোন একটি দরজা খুলে বিপদগ্রস্ত বান্দাকে আলোর পথ দেখান। ঠিক তেমনই মহামারী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনে যখন কেউ দায়িত্ব নেয় না। ঠিক তখনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতার মূর্তপ্রতীক হিসেবে চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মৃতদেহ দাফনের কাজ সম্পন্ন করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর উপজেলা শাখার স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা।
তারই ধারাবাহিকতায় সংগঠনটি শনিবার (২০ জুন) উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাজ সম্পন্ন করে। তারাই একমাত্র টিম যারা পীর সাহেব চরমোনাই এর সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উওর উপজেলা সেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যগন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মতলব উত্তর উপজেলায় একের পর এক করোনার উপসর্গ মৃতদেহ দাফন করে মানবতার দৃষ্টান্ত এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। তারা মানবতার মূর্তপ্রতীক হিসেবে কাজ করছে।
উল্লেখ্য বৈশ্বিক মহামারি করোনার এই দুর্যোগে অনেক ভালো মানুষগুলো এই দেশে অনেকগুলো ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। তারা করোনাকালের শুরুতেই কোনো কোনো রাজনীতিক ও সামাজিক সংগঠনের আগে সচেতনাতা সৃষ্টিতে এগিয়ে এসেছেন। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে মাক্স- বিতরণ করেছেন। চাল, ডাল, তেল, আলু, নুনসহ খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন। করোনায় শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে না পারা কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। এখনো দিচ্ছেন।
এরপর সারাদেশে যখন করোনার আগ্রাসন বেড়ে যায়, বেড়ে যায় মানুষের মৃত্যর মিছিল,যখন আল্লাহকে ভয় না করা মানুষেরা করোনাকে ভয় করে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করা লাশের দাফনেও মুখ ফিরিয়ে নেয়। বাবা- মায়ের লাশ বাগানে রেখে, আপন ছেলে-সন্তান, আপন স্বজন-প্রতিবেশির লাশ পথেঘাটে রেখে পালিয়ে যায়। মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়- ওমুক ব্যক্তি করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন, কেউ তার দাফনে বা জানাজায় যাবেন না। ঠিক সেই নির্মম পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উওর উপজেলা শাখার দাফন টিমের এই করোনা যোদ্ধা সামনে এগিয়ে এসেছেন ফেরেস্তার মতো, এযুগের মর্ডানদের ভাষায় কথিত এলিয়েনের মতো। মানবতারে মূর্তপ্রতীক হিসেবে। তারা টিম গঠন করে- ছবি ফোন নাম্বার দিয়ে করোনাক্রান্ত রোগীর জানাজা ও দাফনের দায়িত্ব নেবার ঘোষণা দিয়েছেন।
যারা চাঁদপুরের মতলব উত্তরে এই টিমটি ইতোমধ্যই ৮ জন মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দফন করেছেন। যাদের কেউ কেউ করোনাক্রান্ত ছিলেন না। এটা জানবার পরেও ওই মৃতব্যক্তির স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মী, দলের লোক, ধর্মের লোক, মতের লোকেরা জানাজায় আসেননি, দাফন করতে কবরে নামেননি। অথচ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উওর উপজেলা শাখার দাফন টিমের এই মানুষগুলোরও করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের পরিবারেও মা-বাবা, স্ত্রী আছে, কোমলমতি সন্তান আছে। এইসব ভয়, মায়া-মমতাকে পেছনে ফেলে, দল-মত, আদর্শকে বৃদ্ধ্গাুলি দেখিয়ে, তারা মৃতব্যক্তির দাফন কাজ সম্পন্ন করছেন, করে যাচ্ছেন। করোনাক্রান্তের জানাজায় ইমামতি করছেন, দাফন করছেন।
তাদের এই স্বেচ্ছাসেবী টিমে ১৯ জন সদস্য রয়েছেন। এরমেধ্য টিম প্রধান হিসেবে কাজ করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সহকারি টিম প্রধান ক্বারি আঃ রাজ্জাক ও প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন ইসলামী যুব আন্দোলন মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ মেহেদী হাসান, সহকারি সমন্বয়ক মো. রুবেল মিয়াজি। এছাড়াও ওই টিমে সদস্য হিসেবে রয়েছেন, সাইদুল ইসলাম (১), সোহাগ সরদার, মহসিন দেওয়ান, আল হাসান, মাওঃ আশিকুর রহমান, আল হাসান, শাহজালাল, ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান, আল ইসলাম, নাছির উদ্দিন, কাউছার আলম, আল আমিন, হাফেজ বায়েজিদ, সাইদুল ইসলাম (২), হৃদয় মিয়া প্রমূখ। সার্বিক বিষয়ে পরিদর্শন করেন মাওলানা আতাউল্লাহ মহসিন।
দাফন টিমের প্রধান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উওর উপজেলা সেক্রেটারি মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, করোনা এমন একটি রোগ যেখানে স্ত্রী, সন্তান কেউ কারো কাছে থাকেনা। মারা গেলে পরিবারের লোকজন পর্যন্ত কাছে আসেনা। দুনিয়াতে কোন কাজই অসমাপ্ত থাকে না। আর এটা তো দাফন কাফনের কাজ। তাই আমরা চরমোনাই পীর সাহেবের নির্দেশে আমরা করোনায় স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পক্ষ থেকে যখনই আমাদেরকে ডাকা হয় স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যাক্তিদের দাফন কাজে এগিয়ে এসেছি মহান সৃস্টি কর্তাকে বিশ্বাস করে। মৃত্যু তো একদিন হবেই, মহান আল্লাহ যেদিন মৃত্যুর ডাক দিবেন, সেদিন আর দুনিয়াতে থাকতে পারবো না। এর আগে কিছু ভাল করতে পারলেই মঙ্গল। গতকাল পর্যন্ত ৮ জনের দাফন সম্পন্ন করেছি। যেখানেই করোনায় কেউ মারা যাবে চরমোনাই পীর সাহেবের নির্দেশে আমরা করোনায় স্বেচ্ছাসেবক টিম সেখানেই ছুটে যাবো দাফনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য। করোনা আক্রান্ত কোন লোক মৃত্যুবরণ করলে উপজেলা প্রশাসন আমাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। আমরা সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
মতলব উত্তরে এ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা ৮ জনের মৃতদেহ দাফন সম্পন্ন করেছেন। উপজেলার শিকারিকান্দি গ্রামের মৃত রিপন মিয়া (২৮), বরুরকান্দি গ্র মৃত ওমর ফারুক সরকার (৩৮), ফরিদকান্দি গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিন (৭৫), ঠাকুরচরের মৃত ইলিয়াস শিকদার (৭৫), কাঁচারিকান্দির মৃত জামান হোসেন (১২), মিরাকান্দি গ্রামের মৃত সামছুল হক মোল্লা (৫৮),সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃত শাহিনুর বেগম (৫০) ও সর্বশেষ শনিবার (২০ জন মোহনপুরের মোহাম্মদ গ্রামের জাকির হোসেন (৫৫) এর এর লাশ দাফন করেছেন তারা।
প্রতিবেদক:কামাল হোসেন খান,২০ জুন ২০২০