জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৩০ মে বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার থেকে ১৫ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হামলায় নিহত হন। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আগামীকাল সকাল ১০ টায় বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দ শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পন ও মাজার জিয়ারত করবেন।

পরে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল এবং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) উদ্যোগে স্বেচছায় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

এ দিন সকাল থেকে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মেডিক্যাল ক্যাম্প ও বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।
এ ছাড়া মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভোর ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জিয়াউর রহমানের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে জেলা ও মহানগরীসহ সকল ইউনিট এবং ইউনিটগুলোর অধীন সব ইউনিট কার্যালয়ে ৩০ মে ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

এসব ইউনিটে নিজ নিজ এলাকার সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে।
জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাঁকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

আজ ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে আজ বুধবার তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান ডামি আওয়ামী সরকার দেশে একদলীয় দুঃশাসন পুন:প্রতিষ্ঠা করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে বর্তমান সরকার। সেজন্য গণতন্ত্রের পক্ষে আপোসহীন যোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, তাকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন সৃষ্টিকারী নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রকামী প্রায় ৫০ লক্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে অনেককে সাজা দেওয়া হয়েছে। নিত্যদিনই অসংখ্য নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে। হত্যা, খুন, গুম ও বিনা বিচারে হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতন যেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভাগ্যের লিখন করা হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রুপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে আমাদের বারবার স্মরণ ও অনুসরণ করতে হবে। এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ ও অবৈধ সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’

রণাঙ্গনের অনন্য মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক, নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তার অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা—কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ জিয়ার প্রবর্তিত কালজয়ী দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ও তার কালোত্তীর্ণ আদর্শ বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রবল উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্য এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষার চেতনা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ থেকে উৎসারিত।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব এক ক্রান্তিকালে। ১৯৭১ সালে তার কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা সেই সময় সারাদেশে মানুষের মনে সাহস ও উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। তিনি (জিয়াউর রহমান) জাতীয় সকল সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়।’

স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে তার অনবদ্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা পুরো জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণা বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতো তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষকে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে জাতি বিদেশী শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। বিজয় অর্জনের অব্যবহিত পরে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর দুর্বিনীত দু:শাসনে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও কাংখিত গণতন্ত্র মাটিচাপা পড়ে। একের পর এক দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, বহুমত ও পথের অনুশীলন বন্ধ করে দেওয়া হয়।;’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী—জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও বাক স্বাধীনতা। তিনি তার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সব দলের রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে বাংলাদেশ হয় খাদ্য রপ্তানীকারক দেশ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, সমাজ, অর্থনীতি, শিল্প ও প্রযুক্তিসহ সব সেক্টরেই কর্মচাঞ্চল্যের মাধ্যমে অগ্রগতি নিশ্চিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘এই মহান উদার গণতন্ত্রী শহীদ জিয়ার জনপ্রিয়তা দেশী—বিদেশী চক্রান্তকারীরা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশবাসী একজন মহান দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদীকে হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোন ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ৩০ মে ২০২৪

Share