চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের কৃতি সন্তান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল অক্ষমতাকে জয় করে ছিনিয়ে আনলেন বিজয়। চলতি বছরে এইসএসসিতে যেখানে ফলাফলে ধস, সেখানে জিপিএ ফাইভ পেয়ে সবাইকে তাক লাগালেন জন্মগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধি সাইফুল ইসলাম।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই অপ্রতিরোধ্য এই বালক। ২০১৭ সালের এইসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে সে।
১৯৯৯ সালের ২ জানুয়ারি উপজেলা দক্ষিণ কড়ৈতলী মিজি বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন এই মেধাবী বালক। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল দিনমজুর আবুল কালাম ও গৃহিনী রাশেদা বেগমের তিন ছেলে দুই মেয়ের মাঝে একমাত্র শিক্ষিত ছেলে সাইফুল।
তাদের পরিবারে আর কেউই এতোটা শিক্ষার্জন করতে পারেনি যতোটুকো সে পেরেছে।
২০০৭ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন ডিপিওডির নজরে আসে সে।সংগঠনটি তাকে লক্ষীপুরের দালাল বাজারস্ত সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রমের (আবাসিক) ভর্তি করিয়ে দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় প্রতিভার বিকাশ। যেনো অনেকটাই গর্ত থেকে টেনে উপরে তোলার মতো।
সাইফুল ওই স্কুল থেকে ২০১৫ সালে এ গ্রেড পেয়ে এস,এস,সি পরীক্ষায় পাস করেন।এরপর ভর্তি হন ঢাকার মিরপুরের বাঙলা কলেজের মানবিক বিভাগে।
সাইফুলের পিতা জানান, ‘ভবিষৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। দিন মজুর আমি। কি করে চালাবো আগামীর খরচগুলো। নুন আনতে যে পান্তা পুরায়। বিষয়টি নিয়ে সাইফুল নিজেও চিন্তিত। সাইফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছা পোষণ করেন।’
এদিকে ফলাফল বের হওয়ার পর থেকে এখন তার গ্রাম ফরিদগঞ্জের কড়ৈতলিতে চলছে আনন্দের জোঁয়ার।
কড়ৈতলির বাসিন্ধা মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘সাইফুল আমাদের এলাকার গর্ব। ছোটবেলা থেকেই তাকে চিনি। অসীম প্রতিভার অধিকারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল।’
কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ছোটকাল থেকে চিনি সাইফুলকে। প্রতিবন্ধীরা দেশের বোঝা নয় সম্পদ। এটা প্রমাণ করেছেন আমাদের গ্রাামের ছেলে সাইফুল।আরো ভাল পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভাল কিছু করতে পারবে ছেলেটি। আমরা সাইফুলের কৃতিত্বে গর্বিত। ছেলেটা পুরো গ্রাামের সম্মান বয়ে এনেছে।
তিনি বলেন, ‘বিত্তশালী অনেক পরিবারের সন্তানরা যখন কড়ি কড়ি টাকা থাকা সত্ত্বেও সুশিক্ষা অর্জন করতে পারছে না, ঠিক তখন দিনমজুর পিতার সুশিক্ষিত সন্তান সাইফুল যেনো গোবরের পদ্মফুল হয়ে ফুটে উঠেছে।’
লিখেছেন-রিফাত কান্তি সেন
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৫০ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ