Home / জাতীয় / জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদের মুখোমুখি বাবুল!
জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদের মুখোমুখি বাবুল!

জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদের মুখোমুখি বাবুল!

স্ত্রীর হত্যাকারীদের মুখোমুখি করার জন্য বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার অন্যতম দুই সন্দেহভাজন ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয় শনিবার চট্টগ্রাম থেকে।

আর বাবুল আক্তারকে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় শুক্রবার রাতে। তাহলে মুখোমুখি করা

এদিকে মাহমুদা হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন ও পুলিশের সোর্স কামরুল শিকদার ওরফে মুছার কোনো খোঁজ নেই। পুলিশের খাতায় মুসা পলাতক, সপ্তাহ খানেক ধরে লাপাত্তা তাঁর পরিবারও। তবে চট্টগ্রাম পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, মুসাকে আগেই ধরেছে পুলিশ। গোপনীয়তার মধ্যে গত সপ্তাহে তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার পরে মঙ্গলবার (২৮ জুন(=) পর্যন্ত চট্টগ্রামে ফেরত আনা হয়নি। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মুছার পরিণতি দেখে বুঝবেন মামলার শেষটা কী হবে।

মুছার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ঠান্ডাছড়ির মধ্যম ঘাগড়া গ্রামে। পরিবার নিয়ে তিনি চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় থাকতেন। তবে এক সপ্তাহ ধরে ওই বাসায় থাকছে না তাঁর পরিবার। প্রতিবেশীরা মুছার স্ত্রীর মুঠোফোন নম্বর দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৌদি আরবে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে ২০০০ সালে দেশে ফেরেন মুছা। ২০০৩ সাল থেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করেন। সোর্স হিসেবে কাজ করার সুবাদেই নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তিনি (এসপি বাবুল) নজরদারিতে আছেন, তা আমরা কখনো বলিনি। বাবুল আক্তারকে দায়ী করা কিংবা বাবুল আক্তার জড়িত কি না, সে প্রসঙ্গ এখনো আসেনি।’ বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে, বাবুলকে তাদের মুখোমুখি করা হয়েছিল। তিনি এদের চেনেন কি না বা হত্যার রহস্য কী, তা উদ্ঘাটনেই এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কারা তাঁকে হত্যা করেছে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তা স্পষ্ট হয়েছে। যারা হত্যা করেছে, তাদের অনেককেই আমরা ধরে ফেলেছি। বাকিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে।’

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথার সঙ্গে মিলছে না ঘটনার ধারাবাহিকতা। ঢাকার খিলগাঁওয়ের ভুঁইয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে ধরে নেওয়া হয় গত শুক্রবার গভীর রাতে। ১৫ ঘণ্টা পরে শনিবার বিকেলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) জানিয়েছে, মামলার অন্যতম দুই আসামি মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ারকে শনিবার চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের ঢাকায় আনার কোনো তথ্যও জানায়নি পুলিশ।

ফলে বাবুলকে আসামিদের মুখোমুখি করা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হলো।

বাবুল আক্তার চাকরিতে ফিরছেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে সরকার বা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু বলছেন না। সাংবাদিকেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। বাবুলের স্ত্রী হত্যায় জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, এ প্রশ্নেরও জবাব দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আপনারা ধৈর্য ধরেন। আমাদের পুলিশ ও গোয়েন্দা অত্যন্ত চৌকস। তাঁরা সবকিছু উদ্ঘাটন করছেন। আপনাদের কাছ থেকে একটু সময় নিয়ে আমরা জানাচ্ছি। কোনোটা তাৎক্ষণিকভাবে জানাচ্ছি, কোনোটা জানাতে সময় নিচ্ছি। গোয়েন্দারা প্রতিবেদন দিক, তারপর আমরা সব বলতে পারব।’

আলোচিত এ মামলার দুই আসামি আনোয়ার ও ওয়াসিম রোববারই আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তাঁরা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে সাতজন সরাসরি যুক্ত ছিল। এর মধ্যে পুলিশের সোর্স মুছা হত্যার পুরো বিষয়টিতে সমন্বয় করেন।

আর হত্যায় ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র সরবরাহ করেছেন আরেক সোর্স মুছার ঘনিষ্ঠ এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা।

এ ভোলাসহ দুজনকে গত সোমবার রাতে ও গতকাল ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে সিএমপি। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র উদ্ধারের দাবিও করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুরে সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, সোমবার রাতে নগরের বাকলিয়া এলাকা থেকে ভোলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকার রিকশাচালক মনির হোসেনকে ভোররাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

মনিরের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও একটি রিভলবার এবং ছয়টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি পিস্তল মাহমুদা হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে। হত্যার আগে আসামিরা অস্ত্রগুলো ভোলার কাছ থেকে এনেছিল। ঘটনার পর তার কাছে অস্ত্রগুলো জমা দেয়। ভোলার বিরুদ্ধে নগরের বাকলিয়া ও চান্দগাঁও থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি বাকলিয়া থানা-পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন সন্ত্রাসী। গত শনিবার গ্রেপ্তার হওয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, হত্যায় ব্যবহারের জন্য ভোলা দুটি অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন।

মাহমুদাকে খুন করতে ভোলাকে অস্ত্রটি কে দিয়েছিলেন জানতে চাইলে দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, এসব নিয়ে রিমান্ডে তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ভোলা এসপি বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’ কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

মাহমুদা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ভোলা ও মনিরকে আসামি করে বাকলিয়া থানায় একটি অস্ত্র মামলা করা হয়। অস্ত্র সরবরাহ করায় ভোলাকে মাহমুদা হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অস্ত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিম উদ্দিন জানান, অস্ত্র মামলায় ভোলা ও মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়নি।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, ভোলাকে মাহমুদা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেনর চৌধুরীর আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপরদিকে ভোলা ও মনিরকে বাকলিয়া থানার অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নওরীন আক্তার কাঁকনের আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বিকেলে কড়া পুলিশ পাহারায় দুজনকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

সিএমপির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোলা ও মুছার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দুজনই পুলিশের সোর্স। ভোলা সম্পর্কে নগরের ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল হক গতকাল বলেন, ভোলা গত বছর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে সরে আসেন।

গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ বলা শুরু করে, জঙ্গি দমনে বাবুলের সাহসী ভূমিকা ছিল। এ কারণে জঙ্গিরা তাঁর স্ত্রীকে খুন করে থাকতে পারে। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে পাল্টে গেছে পুলিশের বক্তব্য, উল্টে গেছে দৃশ্যপট। (প্রথম আলো)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৫ এএম, ২৯ জুন ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Leave a Reply