Home / চাঁদপুর / ‘জাল ফেল্লে যদি ভাইগ্য ভালো থাহে তা অইলে ছক্কা’

‘জাল ফেল্লে যদি ভাইগ্য ভালো থাহে তা অইলে ছক্কা’

এবছর শীতের মৌসুমেই বলতে গেলে অনেকটা অসময়েই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ সাগর মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশ কয়েক বছর পর এবার শীতের মৌসুমে ইলিশের দেখা পেল জেলেরা।

ইলিশ গবেষকরা বলছেন, জাটকা নিধন রোধ ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় এই সাফল্য এসেছে। আকারে বড় না হলেও অসময়ে জালে রূপালী ইলিশ পেয়ে খুশি জেলে ও ব্যবসায়ীরা।

পদ্মা, মেঘনা নদী ও নদী তীরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- জেলেদের ইলিশ ধরার ধুম।

জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত বর্ষাকালকে ইলিশের মৌসুম বলা হয়। আর শীত মৌসুমে চলে ইলিশের আকাল। শীতের সময় সারাদিন জাল ফেলেও দেখা মেলে না একটি ইলিশের। হঠাৎ করেই গত দুই সপ্তাহ ধরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। উৎসাহ নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন জেলেরা। বেজায় খুশি পদ্মা-মেঘনা পাড়ের মানুষ।

হানারচর এলাকার জেলে হাবু ছৈয়াল জানান, বেশ কয়েক বছর শীতের সময় ইলিশ পাওয়া যেত না। এবার নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

বহরিয়া এলাকার জেলে শফিক বলেন, শীতে নদীতে ইলিশ মাছ না থাকায় তারা খেয়ে, না-খেয়ে থাকতেন। এবার ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাই সবাই মিলে মাছ ধরছেন। বেচা-বিক্রি করে সব খরচ বাদে ভালো্ই লাভ হচ্ছে।

রাজরাজেস্বরের জেলে মানিক মিয়া বলেন, ‘একবার জাল ফেল্লে যদি ভাইগ্য ভালো থাহে তা হইলে তো ছক্কা। বেইচা অনেক লাভ। অনেক বছর পর এবার শীতকালেও নদীতে ইলিশের দেহা মিলছে।’ তিনি জানান, পদ্মা, মেঘনা নদী ছাড়া সাগর মোহনা এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ।

অসময়ে ইলিশের প্রচুর আমদানিতে সরগরম দেশের অন্যতম পাইকারি ইলিশের আড়ৎ চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাট। আকার ভেদে ইলিশের দাম ভিন্ন। ৪০০ খেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। এ ঘাটের ব্যবসায়ী শবে বরাত জানান, শীতের সময় ইলিশ মাছ বিক্রি হতো দেড়, দুই হাজার টাকা কেজি দরে। কিন্তু এবার আমদানি বেশি হওয়ায় দামও কম।

মাছ ঘাটের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান কালু বলেন, শীতের এই সময়ে হঠাৎ বেড়েছে ইলিশের আমদানি। প্রতিদিন এ আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ মন ইলিশ। অথচ গেল বছরগুলোতে শীতের মৌসুমে ঘাটে ৮০-৯০ মনের বেশি ইলিশ আমদানি হয়নি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুর রহমান বলেন, শীতে ইলিশ পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ৭০ কিংবা ৮০ দশকে সারা বছরই ইলিশ পাওয়া যেত। জাটকা ও ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় এমনটি হয়েছে।

জাটকা ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ কয়েকটি এলাকার নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় অক্টোবরের ভরা পূর্ণিমায় ১৫ দিন ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকে দেশের ৫ অঞ্চলে ইলিশের অভয়াশ্রম নদীতে।
: আপডেট ১:২৬ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ