স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বসবাস। ধানমন্ডির ৭/ই’র ১০ নম্বরে দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসা ভাড়া নেন সাইফুল ইসলাম। মহল্লায় সুনামও বেশ। ‘ভদ্র হিসেবেই’ সাইফুলের পরিচিতি মহল্লার ভাড়াটিয়া, বাসিন্দা ও দোকানদারদের কাছে। সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন, ভালো ব্যবহার করতেন।
কিন্তু রাত হলেই তৈরি করতেন কোটি কোটি টাকার জাল নোট। ছাড়তেন বাজারে। রাত হলে বিভিন্ন জাল টাকার কারবারির সঙ্গে যোগাযোগ বেড়ে যেত। ভাড়াবাসাতেও আসতেন অন্য জাল টাকা কারবারিরা।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ভোরে রাজধানীর ধানমন্ডির ৭/ই’র ১০ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার বাসা তল্লাশি করে ওয়্যারড্রব এবং খাটের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েক কোটি টাকার জাল নোট। যার মধ্যে সব ৫০০ ও ১০০০ হাজার টাকার নোট। এ সময় টাকা তৈরির সরঞ্জাম হিসেবে কাগজ, প্রিন্টার, টোনার, কেমিক্যাল, ডায়াচসহ টাকা তৈরিতে যা লাগে সব পাওয়া যায়।
সাইফুলকে গ্রেফতারের পর অবাক হয়েছেন এলাকাবাসী। কেউ ভাবেননি হাসিমাখা সাইফুল আড়ালে রাজধানীর অন্যতম জাল টাকা তৈরির কারিগর।
অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি কাইমুজ্জামান খান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার একটা প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীতে একটি জাল টাকার চক্র কাজ করছে।
তিনি বলেন, র্যাবের গোয়েন্দা দল চক্রটি ধরতে নজরদারি শুরু করে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে রাজধানীর কদমতলী থেকে শাহ আলম নামের একজনকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিম ধানমন্ডির সাইফুলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাসায় তল্লাশি করে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
সাইফুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। তাই তাদের বিষয়ে বিস্তারিত পাওয়া যায়নি বলে জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক।
তিনি বলেন, চক্রের আরও সক্রিয় সদস্য র্যাবের নজরদারিতে রয়েছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে। যে টাকা পাওয়া গেছে সেটা অবশ্যই এক দুই কোটি টাকার ওপরে। গণনা না করে বলা যাচ্ছে না।
সাইফুল ও শাহ আলম আগে গ্রেফতার হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন নিশ্চিত না তিনি তারা এর আগে আটক হয়েছিল কিনা। তবে আমাদের যে অপরাধীর ডাটা বেজ আছে সেটা পর্যালোচনা করে বলা সম্ভব হবে।
সাইফুল যে মহল্লায় থাকেন ওই মহল্লার দোকানি আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘লোকটা ভদ্রই জানতাম। আসত যাইত গালভরা হাসি দিত। কখনও আমাদের কাছে জাল টাকার নোট দিতে দেখিনি। টেরও পাইনি। কিন্তু জাল টাকা বানান, কারবার করেন কখনও বুঝতেই পারিনি!’
ভবনটির তৃতীয় তলার যে ফ্ল্যাটে সাইফুল ভাড়া থা,কতেন তার পাশের ফ্লাটে থাকেন বাড়ির মালিক। অভিযানের পর তিনি তাজ্জব বনে যান। তিনি বলেন, ‘পাশের ফ্ল্যাটে এমন কাণ্ড; কিন্তু এতদিন ধরে টেরই পেলাম না।’
সাইফুলের বাসার নিচের বাসিন্দা রোজিনা বেগম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই তো তাকে চিনি। আমাদের যে হোটেল আছে সেখানে প্রায়ই তিনি নাস্তা করতেন। কোনোদিন তো জাল টাকা তার কাছ থেকে পাইনি। সবসময় হাসি মুখে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। বিভিন্ন গল্প করতেন।’
করেসপন্ডেট