এক মৃতের নামাজে জানাজার একাধিক জামাত বর্তমান সময়ে সামাজিক প্রভাব ও মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এথন থেকে কয়েক দশক আগেও একাধিক জানাজার নামাজের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো প্রচলন ছিলো না।
এখন তো প্রায়ই দেখা যায়, কেউ শহরে মারা গেলে তার বসবাসের মহল্লার মসজিদ থেকে শুরু করে আরও বেশ কয়েক স্থানে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
অনেক সময় তো জানাজার সংখ্যা হয়ে যায় ১০-১২টি। এভাবে নামাজে জানাজার দৃষ্টান্ত মহানবী (সা.) ও তার অনুসারী সাহাবাদের জীবনে নেই। এটা নামাজে জানাজার বিধান নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ছাড়া আর কিছুই না।
জানাজার নামাজ একটি ফরজ কাজ। মহানবী (সা.) আদেশ করেছেন, তোমরা সবার জানাযার নামাজ আদায় করো। মৃত ব্যক্তি ভালো হোক আর মন্দ হোক। তিনি আরও ইরশাদ করেছেন, একজন মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি অধিকার রয়েছে। ওই সব অধিকারের পঞ্চমটি হলো, সে মারা গেলে তার জানাজার নামাজ আদায় করা।
যেহেতু পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য প্রত্যেক মৃত মুসলিমের জানাজার নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়, সেহেতু এটা ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ কিছু মানুষ আদায় করলে সবার ওপর থেকে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। আর এ কথা আমরা সবাই জানি যে, কোনো নির্দিষ্ট ফরজ আমল একাধিকবার করা যায় না। নফল বারবার করা যায়। আপনি আজকের জোহরের ফরজ নামাজ একবার পড়ার পর তা আর পড়তে পারবেন না। এর পরেও যদি আপনি নামাজ পড়েন; তা জোহরের ফরজ নামাজ হবে না- বরং তা হবে নফল নামাজ।
হজ জীবনে একবার ফরজ। একবার হজ করার পর আর কখনও ফরজ হজ করতে পারবেন না। যদি আবারও হজ করেন- তা হবে নফল হজ।
অনুরূপভাবে কেউ মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়া সব মুসলমানের ওপর ফরজে কেফায়া। যখন একবার কিছু মানুষ এক মৃতের জানাজার নামাজ পড়ল তখন এ ফরজ সবার থেকেই আদায় হয়ে যায়। যেহেতু ফরজ নামাজে জানাজা আদায় হয়ে গেছে সেহেতু আবার ফরজ নামাজে জানাজা আদায়ের সুযোগ নেই। এক ফরজ একাধিকবার আদায় করা যায় না।
নফল নামাজ, রোজা ও হজ আপনি যতো ইচ্ছা আদায় করতে পারেন। কিন্তু নামাজে জানাজা নফল নয়, তাই এটা একাধিকবার আদায়ের অনুমোদন শরিয়তে নেই। মোট কথা, ফরজ ও নফল কোনো হিসেবেই এক মৃতের নামাজে জানাজা একাধিকবার পড়া যাবে না।
ইসলামি শরিয়ত যেহেতু মৃতের অভিভাবককে নামাজে জানাজার অগ্রাধিকার প্রদান করেছে, সেহেতু তার অসম্মতিতে কিংবা তার অগোচরে নামাজে জানাজা পড়া হলে শরিয়ত প্রদত্ত অভিভাবকের এ অগ্রাধিকার ক্ষুন্ন হয়। সেক্ষেত্রে অভিভাবকের অধিকার অক্ষুন্ন রাখার জন্য ইসলাম অভিভাবককে বিশেষ অনুমতি প্রদান করেছে, সে পুনরায় নতুন কিছু মানুষ নিয়ে নামাজে জানাজা আদায় করতে পারবে।
মহানবী (সা.) আদেশ করেছেন, মৃতকে যতো দ্রুত সম্ভব কবরস্থ করতে। -সুনানে আবু দাউদ: ৩১৮৩
একাধিক নামাজে জানাজার আয়োজন করলে মৃতকে তাড়াতাড়ি কবরস্থ করার সুস্পষ্ট হাদিসটি অমান্য করা হয়।
ইসলাম মতে মৃতের অভিভাবকের সম্মতিতে নামাজে জানাজা মাত্র একবার হবে। যারা যে কোনো কারণে নামাজে জানাজার জামাতে অংশ নিতে পারবে না- তারা মৃতের জন্য ব্যক্তিগতভাবে মাগফিরাতের দোয়া করবে, সম্ভব হলে দাফন কাজে অংশ নেবে, কবর জিয়ারত করবে, তার জন্য কোরআন তেলাওয়াত করে মাগফিরাত কামনা করবে।
ইসলাম
।। আপডটে,বাংলাদশে সময় ০৭ : ৩৩ পিএম, ১৬ মার্চ ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ