রাজনীতি

এককভাবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জাতীয় পার্টির

এককভাবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ছাড়াও ২৮ আগস্ট যৌথসভা * ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি ।
ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। আর এ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আগামীতে এককভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দেবে দলটি। এর আগে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সংগঠন সুসংগঠিত করার পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতেও সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকদের। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে দুটি লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রথমত. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে ভালো ফল অর্জন। দ্বিতীয়ত. ভালো ফলের পূর্বশর্ত হিসেবে জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করা। এ লক্ষ্যে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে দলকে আরও গতিশীল, সক্রিয় এবং শক্তিশালী করতে চান পার্টির চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, জাতীয় পার্টির ৭৬টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনও ১৫টি জেলায় সম্মেলন বাকি রয়েছে। ডিসেম্বরের আগেই এসব জেলার সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ নেতাদের হাতে মাঠপর্যায়ের নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ডিসেম্বরে ঢাকার মহাসমাবেশে লক্ষাধিক লোকসমাগমের টার্গেট রয়েছে দলটির। এর আগে পার্টির চেয়ারম্যানের বিভাগীয় পর্যায়ে সফরে যাওয়ার কথাও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বৃহস্পতিবার প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য- জাতীয় পার্টিকে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় নেয়া। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন দলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করা। আমরা জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি আগামীতে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে।’

আগামী দু’মাসের মধ্যে বাকি ১৫ জেলায় সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শিগগিরই এই তিন জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি আগাশী দু’মাসের মধ্যে বাকি জেলাগুলোতেও সম্মেলন করা হবে।

সূত্র জানায়, আগামী ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। পার্টির প্রেসিডিয়াম, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককেও সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যৌথসভা থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রথমত. তৃণমূল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও শক্তিশালী করা, দ্বিতীয়ত. এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করা। তিনি বলেন, ‘আমরা আর সময় নষ্ট করতে চাই না। এখন থেকেই প্রার্থী বাছাইসহ জাতীয় নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করতে চাই। এর আগে দলকেও তৃণমূল পর্যায়ে গোছানোর কাজটি শেষ করতে চাই।

পার্টির মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে। এবারের মহাসমাবেশটি হবে অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে ব্যতিক্রম। এই সমাবেশে যেমন লোকসমাগমের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তেমনি মহাসমাবেশ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কথাও ঘোষণা দেয়া হবে। আগামী নির্বাচনের আগে ঢাকার এ মহাসমাবেশ জাতীয় পার্টির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হবে বলে দাবি করেন তিনি।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে দলের সংসদ সদস্যদের যার যার নির্বাচনী এলাকায় আরও বেশি সময় দেয়ার জন্য বলেছেন পার্টির চেয়ারম্যান। সংসদ সদস্যদের বাইরে দলের শীর্ষ নেতা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও যার যার এলাকায় যাতায়াত বাড়াতেও বলেছেন তিনি। সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করতে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোনোভাবে প্রার্থী সংকটে না পড়ে দলটি।

গত ১৪ এপ্রিল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন-পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় কমিটি গঠনের কাজটি শেষ করেন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। এবারই প্রথম নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেন তিনি। এর আগে দীর্ঘদিনের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে পুনর্বহাল করেন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। পাশাপাশি স্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং ছোট ভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান করেন তিনি। মহাসচিব পদ থেকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে সরিয়ে দিলেও পরে তাকে চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে আগের যে কোনো সময়ের চাইতে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। দলের ভেতরে বিরোধও নেই। এরশাদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েই সবাই পথ চলছেন। এসব বিবেচনায় নিয়েই আগামী নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন পার্টির কর্ণধার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেইসঙ্গে দলকে আরও সংগঠিত করারও উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।(যুগান্তর)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:৪৭ পি,এম ২৬ আগস্ট ২০১৬,শুক্রবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Share