যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্ট কার্ড নেই তারা পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা জন্মনিবন্ধন সনদ দেখিয়ে ছয় মাসের জন্য দুটি মোবাইল সিম কিনতে পারবেন। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নেওয়া ওই সিম এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করতেই হবে। আগে ওই তিন ধরনের সনদের বিপরীতে দুটির বেশি সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকলেও এখন আর থাকছে না। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন তাদের ২৫০তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লিখিত তিনটি সনদের একটির বিপরীতে যাদের দুটির বেশি সিম নিবন্ধন করা আছে তাদের অতিরিক্ত সিমের নিবন্ধন বাতিল (ডি-রেজিস্টার) করতে হবে। এ ব্যাপারে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দেবে বিটিআরসি।
প্রসঙ্গত, এখন একটি এনআইডি বা স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৫টি সিমের নিবন্ধন করতে পারছেন।
জানা গেছে, ওই তিনটি সনদের বিপরীতে নিবন্ধিত সিমের মেয়াদ থাকবে ছয় মাস। এই মেয়াদ পার হওয়ার ৩০ দিন আগে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রাহককে এসএমএস দিয়ে মেয়াদ পার হওয়ার বিষয়টি জানাবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পুনরায় নিবন্ধনের জন্য অনুরোধও জানানো হবে এসএমএস-এ। নিবন্ধন না করা হলে নম্বরগুলো নিষ্ক্রিয় করা হবে।
তবে বাংলাদেশি নাগরিকরা উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তিনটি সনদের বিপরীতে নিবন্ধিত সিমের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘এটা একটা নিয়মের মধ্যে আনা হচ্ছে। দেশি, বিদেশি সবার জন্যই এই নিয়ম প্রযোজ্য। তবে পরে অবশ্যই তা নিয়মিত (জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে নিবন্ধন) করতে হবে। এর ফলে সিম নিয়ে কোনও অপরাধমূলক কাজ হবে না বলেও তিনি আশা করেন।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এসব কাগজের বিপরীতে যাদের দুটির বেশি সিম নিবন্ধন করা আছে তাদের এই নির্দেশনা প্রদানের ৯০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত সিমের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে মোবাইল ফোন অপারেটর সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে জানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একটি জন্মনিবন্ধন সনদের বিপরীতে ১৫টি সিম নিয়েছেন এমন সংখ্যা ১৫৪টি। ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১৫টি সিম নিয়েছেন এমন সংখ্যা ২৬ এবং একটি পাসপোর্টের বিপরীতে ১৫টি করে সিম নিয়েছে এমন সংখ্যা ৬৪টি।
ওই প্রতিবেদনেই আরও দেখা গেছে, একটি জন্মনিবন্ধন সনদের বিপরীতে ১টি সিম নিয়েছেন এমন সংখ্যা ১২০টি, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১৫টি সিম নিয়েছেন এমন সংখ্যা ২২টি এবং একটি পাসপোর্টের বিপরীতে ১৫টি করে সিম নিয়েছে এমন সংখ্যা ৩০টি।
সিমের সংখ্যা যতই কমেছে ততই বেড়েছে নিবন্ধন। প্রতিটি জন্ম সনদের বিপরীতে ৩টি করে সিম নিয়েছে এমন সংখ্যা ৪ হাজার ৫৪০টি, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ৩৯৪ ও পাসপোর্টের বিপরীতে ৪ হাজার ৩৬৩টি।
এখন বিটিআরসির সিবিভিএমপি (সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম) সিস্টেমে একই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র এবং স্মার্ট কার্ড আইডির ম্যাপিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় একজন গ্রাহকের নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা বের করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র, স্মার্ট কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জন্মনিবন্ধন সনদের প্রতিটির মাঝে সংযোগ বা লিংক স্থাপনের সুযোগ না থাকায় একজন গ্রাহকের পক্ষে ৫টি আইডির বিপরীতে ১৫টি করে মোট ৭৫টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে, যা সরকারি নির্দেশনা পরিপন্থী।
কমিশন আরও বলছে, সব ক্ষেত্রেই সিম রেজিস্ট্রেশন, ভেরিফিকেশন, রি-অ্যাক্টিভেশন, রি-রেজিস্ট্রেশন, রিপ্লেসমেন্ট, ডি-অ্যাক্টিভেশন ইত্যাদি বাধ্যতামূলকভাবে কেবল সংশ্লিষ্ট অপারেটরের নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র থেকে সম্পন্ন করতে হবে। কোনও রিটেইলারের মাধ্যমে করা যাবে না।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১৯ মার্চ ২০২১