আজকের স্বনির্ভর বাংলাদেশ। ১৯৭১ এর সবুজের বিরাণ ভূমি। স্বাধীনতা-সংগ্রামের বীর শহীদের জীবন উৎসর্গ। সবুজের প্রান্তরে রক্তগঙ্গার মোহনায় নিরস্ত্র বাঙালির স্বাধীনতার বিজয়গাঁথা অর্জন। আমাদের প্রাণ,আমাদের অস্তিত্ব,আমাদের অহংকার,আমাদের গর্ব সবুজের মাঝে লালবৃত্ত বাংলাদেশের ‘জাতীয় পতাকা’।
যে পতাকাকে সম্মান করে বিশ্বদরবার। গর্ব করে তুলে ধরি দেশ-বিদেশে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক পরিমÐলে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি অনবরত। বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া ও জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন করার শিক্ষা দেয়া হয়। তরুণ বয়সে সিনেমা হলে ‘জাতীয় পতাকা উত্তোলনকালীন’ দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতাম। সেই অবুজ মনের অনুভূতিতে আজও আমি সিক্ত।
জাতীয় পতাকা আমাদের মাটি-মানুষের দেহ-প্রাণ। জাতীয় পতাকা আমাদের সম্মান-শ্রদ্ধার অনুভূতি। স্থান-কাল পাত্রভেদে জাতীয় পতাকা ব্যবহারে বিধিলঙ্ঘন দন্ডনীয় অপরাধ। যা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে চোখে পড়ে। জাতীয় পতাকাকে অস্বীকার করা এককথায়-রাষ্ট্রদ্রোহী। জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের একান্ত মনস্তাত্তিক পবিত্র কর্তব্য।
কর্তব্যবোধ-রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে মনসংযোগীয় ভিত মজবুত করতে হবে। কোভিড-১৯ অর্থাৎ করোনা মহামারি প্রতিরোধে মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় মুখে মাস্ক পরা জরুরি। তেমনি জরুরি মাস্কের প্রকারভেদ,লোগো,মাস্কে অংকিত বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীর ভাবগাম্ভীর্য সম্মান প্রদর্শনে সতর্কতা অবলম্বন করা। মাস্ক আমাদের এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে গণ্য এবং ফ্যাশন হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্যবহারের পর মাস্ক বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় যত্র-তত্র দেখা যাচ্ছে। বর্জ্য সংরক্ষণে আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। বর্জ্য সংরক্ষণে শহরে প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্পসংখ্যক স্থান নির্ধারণ। বর্তমান সামাজিক,অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে পরিকল্পিতভাবে অপসারিত বর্জ্যের স্থান সংকুলান ক্ষীণ।
মাস্ক ব্যবহারের উপর প্রচার-প্রচারণা যত বেশি শোনা ও দেখা যায় তার উল্টো চিত্র মাস্ক ব্যবহারের শেষে এর যথাযথ সংরক্ষণ ও অপসারণ সম্পর্কে অবগতকরণ সচেতনতা। যার ফলে মাস্ক এখন শহর-বন্দর, রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, যানবাহন ও কর্মক্ষেত্রের আশপাশে অসহায় পড়ে থাকতে দেখা য়ায়। যা থেকেও কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে,মাস্ক ব্যবহারের পর এর ধ্বংস অনিবার্য। তাহলেই মাস্ক ব্যবহারের অনধিক সুফল পাওয়া যাবে। একটি মাত্র পণ্য মাস্ক ব্যবহারের সচেতনতার সফলতা আমাদেরকে সভ্যসমাজের মানদন্ড উন্নতিকরণের সহায়ক হবে। অন্যান্য বর্জ্য নিষ্কাশনেও আমাদের সচেতনতা বাড়বে। এতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় মনোনিবেশ করবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় উদাসীন হওয়ায় রোগব্যাধি বাড়ছে। পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আমার আজকের নিবন্ধ একান্তই জাতীয় পতাকা অংকিত মাস্ক ব্যবহার নিয়ে।
‘জাতীয় পতাকা অংকিত মাস্ক’ ব্যবহারের পর দেখা যায় যেখানে-সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ফুটবলের ন্যায় ধূলাবালিতে গড়া-গড়ি, কর্মদাক্ত জলাশয়ে ডুবন্ত নাবিকের জীবন রক্ষার ন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে! পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কর্মকালীন জাতীয় পতাকা অংকিত মাস্কের না শোনা করুণ আর্তনাদ সচেতন স্বদেশপ্রেমিদের ব্যথিত, মর্মাহত করে। আপাতদৃষ্টিতে সচেতন মহলের মুখে এ মাস্ক ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের চারপাশেই এই পতাকার নিদারুণ চিত্র দেখা য়ায়। একটি পতাকার জন্য দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে রক্তে ভেসে গেছে বাংলার রাজপথ। অকাতরে জীবন দিয়ে গেছেন আবালবৃদ্ধবনিতা। সম্ভ্রম দিয়েছেন মা-বোনেরা। বিনিময়ে ৫২-এর সালাম,রফিক, জব্বরের রক্তের মাতৃভাষায় সংবিধানে সোনালি অক্ষর মালা দিয়ে পতাকার সর্বোচ্চ সম্মান বজায় রেখে গেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। ঘৃণ্য বিকৃত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র খুব মনোযোগ সহকারে কুরুচিশীল ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় পতাকার অবমাননা/অবমূল্যায়ন বিগত দিনে সময়-সুযোগ পেলেই করে আসছে।
আন্তর্জাতিক এ চক্রের হিংস্র থাবা চলতেই থাকবে। কারণ এরা শকুনের ন্যায় তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছে সোনায় মোড়ানো বাংলাদেশ মানচিত্রে। স্বাধীনতা স্বপক্ষদের একটি ভুলের খেসারত বিরোধী চক্র তিলে তিলে কাজে লাগাতে বরাবরই ব্যস্ত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে এদের চক্রান্তের খোলস বারবার উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের অস্তিত্বে কুঠারাঘাতকারীদের কঠোরহস্তে প্রতিহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে স্বাধীনতার স্বপক্ষের দেশপ্রেমিক সরকার। সেখানে আজ প্রকাশ্যে দিবালোকে জাতীয় পতাকার ব্যবহারের একি অনাকাক্সিক্ষত করুণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে্ ।
জাতীয় পতাকা অংকিত মাস্ক ব্যবহার করে স্বদেশপ্রেমী ভাব দেখানোর পরক্ষণেই ভুলে যায় এর সম্মান-শ্রæদ্ধাবোধের অবস্থান। অবচেতন মানসিকতায় মুখে ছিলো শুধুই মাস্ক;এ ভাবনায় যেখানে-সেখানে ছুড়ে মারছে লাল-সবুজের হৃদপিন্ড। জাতীয় পতাকা অংকিত মাস্ক ব্যবহারের পরবর্তী পর্যায়ে যেভাবে ‘হেলায়’ দেখা যাচ্ছে, জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষায় সুদুরপ্রসারী বিধিনিষেধ আরোপের মন-মানসিকতার গ্রোথিত ভাবনার সময় এখনই।
অগোচরে জাতীয় পতাকার অবমাননা হচ্ছে অহরহ। মাতৃ প্রসবকালীন যন্ত্রনার চেয়েও ভীষণ পীড়াদায়ক দৃষ্টিগোচরীভ‚ত জাতীয় পতাকা অবমাননা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। আমার সোনার বাংলাদেশে, আমাদের জাতীয় স্পন্দনের পবিত্র মর্যাদা রক্ষায় মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণিল ক্ষণে ক্ষণে জাতীয় পতাকা অংকিত মাস্ক ব্যবহার সমীচীন হবে কি হবে না,এটা একান্তই জাতির বিবেকের দায়ভার।
লেখক পরিচিতি : মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া , সাংগঠনিক সম্পাদক , নজরুর গবেষণা পরিষদ , চাঁদপুর্।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur