আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এক্ষেত্রে জামায়াতসহ ডান-বাম- সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে পরবর্তী ‘কর্মকৌশল’ নির্ধারণ করবে দলটি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের একদিন পর বিএনপির নীতিনির্ধারকদের এ বৈঠক হয়। সেখানে তারা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ডিসেম্বরে নির্বাচন প্রসঙ্গ উত্থাপন করার পর এ নিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক আমার দেশকে জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কিংবা নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির প্রতিনিধিদলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা আন্তরিক পরিবেশেও হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে এ আলোচনাকে গুরত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে না দলের প্রতিনিধিরা।
ওইদিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বের হয়ে বিএনপির প্রতিনিধিদলের প্রধান ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে এক প্রকার হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, তারা বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় একেবারেই সন্তুষ্ট নন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ আমাদের দেননি। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিনি নির্বাচন শেষ করতে চান।’
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, দল ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে ‘আমরা আবার আপনাদের সামনে আসব’।
বৈঠক শেষ সরকারের তরফ থেকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন— কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন জুনের থেকে পেছাবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন বিলম্বিত করা হবে না বলেও জানান তিনি।
এরপরই জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী কর্মকৌশল নির্ধারণে সব দলের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির কয়েকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমার দেশকে বলেন, বৈঠকে দেশের প্রায় সব দলের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে থাকা সমমনা দলগুলোর বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করব। আগ্রহ দেখালে সেসব দলের সঙ্গেও বসবে বিএনপি।
জামায়াতের সঙ্গেও বিএনপি বৈঠক করবে বলে জানান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দলটি সব দলের মতামত নেওয়ার পর সব দলকে সঙ্গে করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করবে। এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চাইবে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ায় বিষয়ে সব দলের মধ্যে ঐকমত্য আছে।
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার আগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সেই বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে আগামী তিন মাস নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার বিষয়ে আলোচনা হয়। শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, মিছিল। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে এসব কর্মসূচি শুরু হয়ে ধাপে ধাপে তা পালিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট বার্তা না পেলে এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা বলেছিলেন বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১৯ এপ্রিল ২০২৫