জাতীয়

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সর্বস্তরের মানুষ। হাজারো মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ভরে যায় শহীদ বেদী।

শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল শহীদদের স্মরণে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।

সাতটার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আসেন। স্মৃতিসৌধ চত্বরে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন প্রধান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৌঁছেই শেখ হাসিনা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য ও সন্তান এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আবেগাফ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সান্তনা দেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদের চোখের জল মুছে বুকে টেনে নেন প্রধানমন্ত্রী।

এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্মৃতিসৌধে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতিও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

এসময় শেখ হাসিনা মন্ত্রী সভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর শহীদ বেদীকে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতাদের নিয়ে ১৪ দলীয় জোট, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ছেড়ে যাওয়ার পর শ্রদ্ধা নিবেদনে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এ সময় ভোর থেকে অপেক্ষারত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজারো মানুষে ঢল নামে। কালো পোশাক কিংবা কালো ব্যাজ পরে ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন তারা। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ, তরুণ, তরুণী সব বয়সী মানুষ শ্রদ্ধা জানান।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দলটির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সিপিবি, বাসদ, জনসংহতি, গণফোরাম, এলডিপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে এ জাতিকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান কবি- সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিক্ষেত্রে বরণ্যে ব্যক্তিদের বেছে বেছে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যাকরে হায়েনারা।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে ইতিহাসে কলঙ্কের দিন ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়।

বিজয়ের পর রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা, মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় অগণিত শহীদ বুদ্ধিজীবীর গলিত ও ক্ষত বিক্ষত মরদেহ। মরদেহে ছিলো নির্যাতনের চিহ্ন। অনেকের চোখ, হাত-পা বাঁধা ছিলো। কারো শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা, কাউকে হত্যা করা ধারালো অস্ত্র দিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ রকম বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায় সারা দেশে। (বাংলানিউজ)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২ : ০০ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Share