চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক | আপডেট: ০২:৫০ অপরাহ্ণ, ০১ আগস্ট ২০১৫, শনিবার
দুদিন আগে যা ছিলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল, আজ তা বাংলাদেশ। সেখানে আজ উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা। বেজেছে জাতীয় সঙ্গীত। মূল ভূখণ্ডে মিশে গেছে ভারত বাংলাদেশের ১৬২ ছিটমহল। যেখানে বাংলাদেশের মানচিত্রে যুক্ত হয়েছে ১১১টি নতুন ভূখণ্ড। ‘ছিটমহল বিনিময় চুক্তি’ কার্যকর হওয়ায় বিচ্ছিন্ন জনপদের মানুষ পেলো নাগরিকতার স্বাদ, দুই জাতিরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বন্দীত্বের অবসান হলো তাদের। শেষ হলো ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস।
মুক্তির এ আনন্দে উদ্বেল নীলফামারী, লালমনিরহাট আর পঞ্চগড়ের ১১১টি ছিটমহলের হাজার হাজার বাসিন্দা। নাগরিকত্বের দ্বন্দ্ব ঘুচিয়ে তারা এখন বাংলাদেশের মানুষ। তাদের বসতভিটা এখন বাংলাদেশের মানচিত্রের অংশ।
শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ তিন জেলার ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
দেশের বিভিন্ন তিনটি জেলা থেকে সংবাদকর্মীরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন সেখানকার ছিটমহলে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের তথ্য। নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা চার ছিটমহলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর মিষ্টি বিতরণ করা হয়, অনুষ্ঠিত হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ উপজেলার চার ছিটমহলের ১১৯টি পরিবারের ৫৪৫ জন মানুষ পেয়েছে তাদের পরিচয়, নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসের সুযোগ এবং প্রিয় মাতৃভূমির জাতীয় পতাকা ও মানচিত্র।
দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে গেলো শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ছিটমহলগুলোয় শুরু হয় বাঁধভাঙা উল্লাস। চলে আজ সকাল পর্যন্ত। উৎসবের অংশ হিসেবে চার ছিটমহলে বানানো হয়েছে তোরণ, প্যান্ডেল। চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর পটকা ফোটানো। রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আনন্দ আয়োজনে পূর্ণতা দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার অভ্যন্তরে ২৯ নম্বর বড়খানকি খারিজা গিতালদহ ছিটমহলে মিজানুর রহমানের বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বলিত করে সেখানকার বাসিন্দারা।
এদিকে লালমনিরহাটে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এ জেলার ছিটমহলগুলোতে উড়ানো হয় জাতীয় পতাকা, গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। বাংলাদেশে থাকা ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের সবেচেয়ে বেশি ছিটমহল ছিল এ জেলায়, ৫৯টি। তবে এর মধ্যে ১৭টিতে কোনো মানুষের বসবাস নেই। বাংলাদেশের অংশ হয়ে প্রতিটি ছিটমহলেই যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। বাসিন্দারা যেন ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দে আছেন, যাঁরা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে এ দেশেই থেকে যাচ্ছেন তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। এ উপজেলার ১১৯ বাশকাঁটা ছিটমহলের হাফিজার রহমান (৬৫) বলেন, ‘প্রায় ৭০ বছরের বন্দীজীবন থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি। আর বেছে নিয়েছি বাংলাদেশী নাগরিকত্ব। আর বিজয়ের দিনটিকে স্মরণে রাখতে আয়োজন করেছি নানা অনুষ্ঠানের।’
পঞ্চগড়েও শনিবার সকাল ৬টায় জেলার প্রতিটি ছিটমহলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পঞ্চগড় জেলার তিনটি উপজেলায় ৩৬টি ছিটমহলে ২০১১ সালের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৮৩৪ জন। এ বছরের (৬ থেকে ১৬ জুলাই) ভারত-বাংলাদেশের যৌথ জনগণনায় পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহলে জন্মসূত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৫০২ জন। বৈবাহিক সূত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৫২৩ জন। মৃত্যুজনিত কারণে বাদ পড়েছে ১৮৭ জন। খুঁজে পাওয়া যায়নি ৬০১ জনকে। সব মিলিয়ে পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহলের বর্তমান জনসংখ্যা ২০ হাজার ৭১ জন। ভারত যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫১২ জন। ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনময় হলো ১৬২টি ছিটমহল। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ড এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের ভূখণ্ড হয়ে গেছে।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি