স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘একাত্তরের শহীদানদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে আসুন আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’
দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সূচনা দিনে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে টানা প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার ভাষণে রাষ্ট্রপতি বর্তমান সরকারের গত চার বছরের উন্নয়ন-সফলতাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
দীর্ঘ ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের যে পথ আমরা পরিক্রমণ করছি, তা আমাদেরকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বসভায় ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি সম্মানজনক অবস্থানে সমাসীন হয়েছে। অচিরেই একটি উন্নত দেশ হিসেবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।’ তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে—এটাই জাতির প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সরকার দারিদ্র্য নিরসন এবং বৈষম্য দূর করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প হিসেবে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫-২০ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই পরিকল্পনায় গড়ে বার্ষিক ৭.৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০২০ সাল নাগাদ ৮ শতাংশে পৌঁছবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) অনর্জিত লক্ষ্যসমূহ শনাক্তকরণসহ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে তা অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। ফলে দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সব সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। একইভাবে সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতেও বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে, ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত, সীমিত সম্পদ ও ক্ষুদ্রায়তনের দেশটিতে বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন শেখ হাসিনা—এটা তাঁর সহানুভূতিশীল হৃদয়, মানবিক সংবেদনশীলতা এবং অপরিসীম সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম চ্যানেল ফোর কর্তৃক প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় অভিহিত করা হয়। এ জন্য রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
ইউনেসকো কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি সংসদে তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতার বজ্রনিনাদিত ভাষণ মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের বাঙালির জন্য ছিল নিরন্তর উদ্দীপনার, নিরন্তর উৎস ও সঞ্জীবনী শক্তি। ইউনেসকোর এ স্বীকৃতি বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রদর্শন বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণার সুযোগ প্রশস্ত করবে।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৩:২০ পিএম, ৮জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার
এএস