চাঁদপুর

চাঁদপুরে প্রশাসনের পদক্ষেপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলেদের জাটকা নিধন

সরকার ও চাঁদপুর প্রশাসনের নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপের পরেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বন্ধ হচ্ছে না জাটকা নিধন। দিনের বেলায় সুযোগ না থাকায় রাতের আঁধারে নির্বিচারে এই জাটকা নিধনে ব্যস্ত একশ্রেণির অসাধু জেলে।

ফলে প্রতিরাতে কয়েক শ মণ জাটকা ধরা হচ্ছে জেলার বিস্তীর্ণ নদী থেকে। এমন ঘটনায় জেলা জাটকা রক্ষা টাস্কফোর্স কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো কঠোর ভূমিকা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

চাঁদপুরে উত্তরে ষাটনল থেকে দক্ষিণে চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনা সীমানা রয়েছে। সরকার ঘোষিত ৬টি অভয়াশ্রমের মধ্যে এই অভয়াশ্রমটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে নদীর তলদেশের মাটির গুণাগুণের কারণে ইলিশের বিশেষ খাদ্য প্লাংটন জন্মে। যা স্বাদ এবং গন্ধ বৃদ্ধি করে ইলিশের পূর্ণতা বাড়িয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে জাটকা বিচরণে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমের এই সময় এখানে জাটকার আধিক্য বৃদ্ধি পায়। যে কারণে খুব সহজেই জেলেরা ছোট ছোট কারেন্ট জাল দিয়ে অনায়াসে জাটকা নিধন করতে পারে। জেলার মতলব উত্তরের ষাটনল, আমিরাবাদ, এখলাসপুর, চাঁদপুর সদরের সফরমালী, আনন্দবাজার, রাজরাজেশ্বর, রনাগোয়াল, বহরিয়া, হরিণা, আখনেরহাট, কাটাখালী, তেলিরমোড় এবং সর্বদক্ষিণে চরভৈরবী এলাকার একশ্রেণির জেলে রাতের আঁধারে জাটকা নিধনের এই মোক্ষম সময় বেছে নিয়েছে।

তবে দিনের বেলায় নদীতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে গুটিয়ে থাকে এসব জেলে। জানা গেছে, প্রতিরাতে নদী থেকে ধরা বিশাল জাটকার চালান ভোররাতে বিভিন্ন পরিবহনে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাচার করছে নদীপাড়ের একশ্রেণির দালাল। অভিযোগ রয়েছে, এই কাজে কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সহযোগিতা করছে।

এরইমধ্যে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাঁদপুরে এমন বেশকিছু যানবাহন জাটকার চালানসহ আটক করতে সক্ষম হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদীপাড়ের বেশ কয়েকজন জানান, মূলত মধ্যরাতে দুই একঘণ্টা নদীতে কারেন্ট জাল ফেলে খুব সহজে জাটকা নিধন করছে জেলেরা। পরে ভোরের আলো ফোটার আগেই নদীপাড়ে অপেক্ষমান আরেকটি পক্ষ নামমাত্র মূল্যে জাটকাগুলো কিনে নিয়ে যায়।

তারা বলেছেন, যদি ওই সময় কঠোর নজরদারি করা হয়, তা হলে কোনো অবস্থায় জাটকা নিধন করা সম্ভব হবে না। এদিকে, কোনো কোনো জেলে পেটের দায়ের নদীতে নামছেন, এমনটা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ, লোভে পড়ে নিজে এবং তাদের শিশু সন্তানদের দিয়ে জাটকা নিধন করছেন।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, গত ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া জাটকা রক্ষা অভিযানে জাটকা নিধনের দায়ে এ পর্যন্ত ৩০ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ জাটকার চালান, অবৈধ কারেন্ট জাল ও মাছ ধরা নৌকা।

তিনি আরো জানান, চাঁদপুরের ৭০ কিলোমিটার নদীতে প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড, জেলা ও নৌ পুলিশের সমন্বয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। তারপরও অসাধু জেলেরা বিশেষ সময় বেছে নিয়ে জাটকা নিধন করছে।

জাটকা নিধন সম্পর্কে চাঁদপুর জেলা জাটকা রক্ষা টাক্সফোর্সের অন্যতম কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ক্ষোভের সঙ্গে জানান, দীর্ঘদিন ধরে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় জেলেদের নিয়ে সভা-সমাবেশ, সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করেছি। জেলেদের অনেকেই ওয়াদা করেছেন, তারা নিজেদের স্বার্থে ইলিশ রক্ষা এবং বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কোনো ওয়াজ-নসিহত কাজে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘জাটকা রক্ষার দুই মাস ছাড়াও আরো দুই মাস মিলে মোট চার মাসে জেলে পরিবারপ্রতি মাসে ৪০ কেজি হারে চাল দেওয়া হচ্ছে। এতে জেলার প্রায় অর্ধলক্ষ জেলে পরিবার এই প্রণোদনা পাচ্ছেন। কিন্তু তারপরও কোনো জেলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চললে তাদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’

দেশের শীর্ষ মৎস্যবিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘মৌসুমের এই সময় জাটকা রক্ষা করা না গেলে, ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তাই যেকোনো মূল্যে জাটকা রক্ষা করা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে জেলেসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এক হয়ে সরকারকে সহযোগিতার তাগিদ দেন তিনি।’

বার্তা কক্ষ
১২ মার্চ, ২০১৯

Share