চাঁদপুরের মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তাঘাট ও হাট বাজারে এখন শুধু জাটকা ইলিশের ছড়াছড়ি। যে যেভাবে পারছে জাটকা কিনে নিচ্ছে। সর্বনিম্ন ৭০ টাকা কেজিতে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে এই জাটকা। কম দামে কিনতে পেরে ক্রেতাদেও মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। অনেকেই জাটকা কিনে ফ্রিজ ভর্তি করছে বলে জানান এলাকাবাসী। দুরদুরান্ত থেকেও ছুটে আসছে ক্রেতারা ।
২৬ জানুয়ারি চাঁদপুর সদর উপজেলার পুরানবাজার, রনাগোয়াল এলাকা থেকে শুরু করে সদর দক্ষীণের চান্দ্রা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায় খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমান জাটকা ইলিশ বিক্রি করছে। ক্রেতাদের সমাগমও দেখা গেছে ঐসব এলাকায়। এসব জাটকার সাইজ এতোটাই ছোট যে কেজিতে ১৫/২০ টার বেশি ওঠে। ৫ ইঞ্চি থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত জাটকার সংখ্যাই অধিক।
খুচরা বিক্রেতারা বলছে নদীতে প্রচুর মাছ পড়ছে। একটু কড়াকড়ি থাকলেও জেলেরা মাছ ধরতে পারছে। চান্দ্রা চৌরাস্তার মাছ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর (ছদ্ম নাম) জানান, তিনি আজ কয়েক দিন যাবৎ জাটকা ছাড়া তিনি অন্য মাছ বিক্রি করছেন না। দাম একটু কম হওয়াতে বেশি বিক্রি হচ্ছে। অভিযান না থাকার কারণে বিক্রিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষীপুর বাজারে গত কয়েকদিন ধরে জাটকা বিক্রি হচ্ছে দেড় ’শ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া দোকানঘর ও বহরিয়া ও হরিনা ফেরিঘাট এলাকায় ১ শত টাকা থেকে আড়াই শত টাকায় জাটকা বিক্রি হতে দেখা যায়। বড়ো সাইজের ইলিশের কেজি এখনো হাজার টাকার উপরে হওয়ার কারণে ক্রেতারা জাটকার দিকেই ঝুঁকছে বলে জানান বিক্রেতারা।
এ ব্যাপারে লক্ষীপুর গ্রামের ক্রেতা বাবুলের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, আমরা গাঙ পাড়ের মানুষ হয়েও ইলিশ কিনে খাইতে পারি না দামের কারণে। এখন জাটকার দাম কিছুটা কম হওয়ার কারণে আমরা একটু মাছ কিনতে পারছি। ইলিশের দাম কমে না আসলে নদীতে জাটকা ধরাও বন্ধ হবে না এবং বেচাকিনাও বন্ধ হবে না।’ ‘সরকার কেবল বড়ো মাছ ধরতে বলে জেলেদেরকে কিন্তু যারা কিনে খাবে তাদের অবস্থা কি তা সরকার ভাবে না। সব কিছুর মূল্য নির্ধারণ করা হয় কিন্তু ইলিশের দাম নির্ধারণ করা হয় না। যার কারণে কেউ কারো কথা শুনে না। ’
দোকানঘর এলাকার ক্রেতা ইসমাইল মিজি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ইলিশের দাম যদি কম হতো তাহলে জাটকার দিকে মানুষ ফিরাও তাকাইতো না। জাটকার দাম কিছুটা কম হওয়ার কারণে এর চাহিদা অনেক বেশি। তাই জেলেরাও জাটকা ধরতে মরিয়া হয়ে উঠছে আর ক্রেতরাও স্বাচ্ছন্দে কিনে খাচ্ছে’। তাই সরকারের উচিৎ সকল মওসুমে ইলিশের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।’ বড়ো ইলিশে শুধু ব্যবসায়ীরাই লাভবাবন হচ্ছে সাধারণ মানুষ নয়।
হানারচর এলাকার জেলে রাজ্জাক ছৈয়াল চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, বছরের ছয় মাসই এখন জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। অভিযান ছাড়াও কোস্টগার্ড আমাদেরকে মাছ ধরতে বাধা দিচ্ছে। মাছ ধরতে গেলে এমন বাছবিচার করে কি মাছ ধরা যায়? ছোট বড়ো সব ধরনের ইলিশই জালের মধ্যে আটকায়। এরকম বাইচ্ছা বাইচ্ছা কি আর মাছ ধরন যায় ?’
‘আমরাতো জাটকা ধরতে চাই না বড়ো মাছই ধরতে চাই কিন্তু বড়ো মাছ নদীতে নাই। এখন আমরা ধরমু কি? জালের মধ্যে যেইটা আসে সেইটাইতো ধরতে হবে তাই না ?,
বাখরপুর এলাকার আখনের হাটের রশিদ গাজী বলেন, সরকার মাপঝোপ দিয়ে ইলিশ বিদেশে পাঠায় কিন্তু আমরা এমন মাপঝোপ দিয়ে মাছ ধরতে পারি না। মাছ ধরে এখন আর শান্তি নাই। এই পেশা ছাইড়া যাইতেও পারি না। অন্য কোন ব্যবসাও পারি না।
এদিকে জেলেদেরকে নদীতে নামতে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও জাটকা নিধন বন্ধে চাঁদপুর জেলা ট্রান্সফোর্স অবিরাম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই জাটকা নিধনের অপরাধে জেলেদেরকে জেল জরিমানা করছে আইনশৃংখলা বাহিনী। কিন্তু সকল কঠোরতাকে ছাপিয়ে জেলেরা জাল নিয়ে ঠিকই নদীতে নামছে এবং বিপুল পরিমান জাটকা নিধন করে যাচ্ছে।
জেলেদের এমন মানসিতার ব্যাপারে কথা বলেছেন নদী ও জেলেদের সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি নেয়ামত হোসেন । তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ আইন করে জাটকা নিধন ও বিক্রি সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করা। নদীতে আইন কার্যকর থাকবে কিন্তু হাট বাজারে কোন আইন থাকবে না তা হলে কিভাবে বন্ধ হবে জাটকা নিধন ?’
‘তাই সংশ্লিষ্টদের উচিৎ জাটকা নিধন বন্ধে সব সময়ের জন্য জাটকা বিক্রি নিষিদ্ধ করা। তাছাড়া ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরের মানুষ যাতে তুলনামূলক কম দামে ইলিশ খেতে পারে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ ইলিশ যদি দুর্লভ হয়ে ওঠে তাহলে মানুষ অসদোপায় অবলম্বনের পথ বেছে নেয়াটাই সাভাবিক। ইলিশের দাম দিন দিন আকাশচুম্বি হয়ে যাচ্ছে। এটা ভোক্তা ও জেলেদেরকে অসৎপ্রবণ করে তুলছে বৈকী। তাই এই বিষয়ে সরকারকে সঠিক পরামর্শ দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রতিবেদক: ফরিদুল ইসলাম