বৃহত্তর মতলব বিশেষ করে মতলব উত্তর উপজেলার আবালবৃদ্ধ সবাই এক নামে চিনে জহির পাগলাকে। মানসিকভাবে অসুস্থ একজন নিরীহ মানুষ।
এলাকার সবাই ‘জহির পাগলা’কে ভালবাসে। বৃদ্ধরা তাকে সন্তানের মতো স্নেহ করেন। জহির পাগলাকে কেউ মারতে পারে বা শারীরিক আঘাত করতে পারে বিষয়টা কল্পনাতীত।
যে কোন নির্বাচনী প্রচারণায় হোক সেটা স্থানীয় বা জাতীয় অথবা সামাজিক সংগঠনের নির্বাচন সেখানেই হাজির জহির পাগলা। কোথা থেকে যে সংবাদ পায় তা সেই ভালো জানে। নির্বাচনের সামনের সারিতে থাকে। বুঝে হোক আর না বুঝে হোক সবার সাথে সেও স্লোগান ধরে।
সে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বুঝে না, জাতীয় পার্টি বা জামায়াত সম্পর্কে কিছু জানে না। তবে মার্কা বলতে পারে। মতলবের বর্তমান এমপি মায়ার নামে (ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া) নৌকার স্লোগান দেয়। মরহুম নুরুল হুদার (এই আসনের চারবারের এমপি ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান) নামে ধানের শীষে স্লোগান দিতে পারে। আবার এরশাদের লাঙ্গল তার মুখে মুখেই থাকে।
আদর স্নেহ করুক বা না করুক কিন্তু কেউ জহির পাগলাকে কখনো শারীরিক আঘাত করে না। কখনো তাকে লক্ষ্য করে কটু কথাও বলে না। রাত-বিরাতে সে হাটে। প্রকৃতিও হয়তো বুঝে যে জহির আট-দশ জন স্বাভাবিক মানুষের মতো না।
কিন্তু আমরা যারা নিজেদেরকে মানুষ(!) দাবি করি তারা বুঝি না যে জহির আমাদের মতো না। জহির আমাদের মতো অমানুষ না।
চাঁদপুর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ড. জালাল উদ্দিন শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন এমন সংবাদ পেয়ে অন্যদের সাথে জহির পাগলা ছুটে যান জালালের গাড়ি বহরের কাছে।
এসময় ড. জালালের গাড়ি বহরে অর্তকিত হামলা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। সেখানে রণক্ষেত্র তৈরি হয়।
হামলার সময় জহির পাগলা স্বভাব সুলভ ভাবে ‘ধানের শীষ, ধানের শীষ’ শ্লোগান দিতে থাকেন। এর পরেই ঘটে যত বিপত্তি। লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয় জহির পাগলার। উপস্থিত নেতাকর্মীরা অবাক। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জহির পাগলার উপর আঘাত করতে পারে তা কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এরপর স্থানীয়রা পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
জহির পাগলার আহত হওয়ার সংবাদটি ছিলো সে দিন ‘টক অব দ্য মতলব’। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার আহত হওয়ার ছবি দেখে সেখানে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেন। তারা হামলাকারীদের মানষিকতা নিয়ে ও প্রশ্ন তুলেন।
জহির পাগলার উপর হামলার পর সুজাতপুর বাজারে একজন ভোটার বলছিলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বরই জহির পাগলার উপর হামলার খেসারত আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। জহির পাগলার প্রতি মানুষের যেরকম সিমপ্যাথী তৈরি হয়েছে তা হয়তো ক্ষমতাসীনদের জন্য বুমেরাং হবে।
অন্য আরেক জন বলছিলেন, জহির পাগলা তো নৌকা বলেও স্লোগান দেন, আওয়ামী লীগের জনসভায় ও তো যান, কই কখনো তো শুনিনি বিএনপি বা ধানের শীষের নেতাকর্মী বা সমর্থকরা তার উপর এরকম নৃশংস হামলা করেছে। (নয়াদিগন্ত)
হাসান আমান (লেখকের নিজস্ব মতামত, এর জন্য লেখক দায়ী)
বার্তা কক্ষ
২২ ডিসেম্বর,২০১৮