জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী, খাল দখলের মহোৎসব বন্ধ এবং খালের পানি প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য পুনঃখনন ও আগাছা পরিস্কার করার দাবীতে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া’র কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
৬ নভেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম ফরহাদ’র নেতৃত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া আক্তার, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসানুজ্জামান, সাবেক সভাপতি কে.এম নজরুল ইসলাম, ইলিয়াস বকুল, কাউসার আহমেদ, পাভেল আল ইমরান, ফাতেমা আক্তার শিল্পী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহির আহমেদ সাজিদ, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুর রহমান তারু প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই গোটা উপজেলার কোথায়ও বুক সমান পানি কোথায়ও কোমর এবং হাটু সমান পানি জমে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তা ঘাট, বাড়ি ঘর, মাছের ঘের, পুকুর এবং ফসলসহ ফসলী জমি। হাজার হাজার মানুষ হয়ে পয়েছে পানিবন্দি। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে প্রশাসন ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলতে বাধ্য হয়েছে। ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ২৫ আগস্ট বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলেও জলাবন্ধতা থেকে মুক্তি পায়নি মানুষ। দীর্ঘ প্রায় মাসখানেক জলাবন্ধতার কষ্টে ছিলো মানুষ। পানি যখন কমতে শুরু করে তখন ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান দৃশ্যমান হয়।
মৎস অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চাষকৃত জমি মোট ২,৬৯৫ হেক্টর। ৪/৫ দিনের অতিবর্ষনের কারণে বেড়ির ভিতরে প্রায় ৭০০ হেক্টর জলাসয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার ক্ষতির পরিমান আনুমানিক ৯ কোটি টাকা। যারা মাছ চাষের সাথে জড়িত তাদের ভাষ্যমতে এ ক্ষতির পরিমান ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার সমপরিমান।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আউশ ধান ৪৫ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ৯১ হেক্টর, রোপনকৃত আমন ৩১২ হেক্টর, বিভিন্ন জাতের গ্রীষ্মকালিন শাক সবজি ৬৯ হেক্টর, আখ ১৩ হেক্টর। মোট ৫৩০ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০ কোটি ৩০ লক্ষ ২২ হাজার টাকা।
রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা রাস্তার মাটি ক্ষয় হয়েছে। সলিং রাস্তার মাটি সরে যাওয়াতে ইট সরে গেছে। পাকা রাস্তার কার্পেটিং নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার পাশে অনেক বড় বড় গাছ পড়ে গিয়ে রাস্তার অংশ গর্ত হয়েছে। পানির স্রোত রাস্তার যে পাশ দিয়ে নেমে গেছে সে অংশ ভেঙ্গে গেছে। উপজেলা প্রোকৌশলী অফিস, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত যতটুকু পরিমাপ করতে পেরেছে উপজেলার প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমান প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এ হিসাব আংশিক।
উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চল সিআইপি বাঁধের ভিতরে। এ কারণে এখানে বন্যার পানি বাঁধ ভাঙ্গা ছাড়া প্রবেশের সুযোগ নেই। কিন্তু পানি নিঃস্কাষনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় আজ উপজেলাবাসীকে অতি বৃষ্টি হলে পানির নিচে থাকতে হয়। সিআইপির অভ্যন্তরীণ বিশেষ করে ফরিদগঞ্জ উপজেলার খালগুলো আস্তে আস্তে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে কর্তৃপক্ষসহ কারোরই নজর নেই। খাল দখল তথা ভরাট হলে অশান্তি বাড়বে সর্বসাধারণের। খাল বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, ফরিদগঞ্জ বাঁচবে। একসময় ফরিদগঞ্জে জালের মতো ছড়িয়ে ছিলো বহু খাল। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলায়, নজরদারির অভাবে বহু খাল দখল হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে দু’-একটি স্থানে নদী এবং খাল দখল মুক্ত করা হলেও আবারও দখল হচ্ছে। মূলত প্রভাবশালীরা এসব খাল দখল করছে। প্রতিযোগিতা দিয়ে খাল এবং নদী দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বহুতল ভবনও করছে। এ যেনো জোর যার মুল্লুক তার। সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের সর্বোচ্চ প্রদর্শণ চলছে ফরিদগঞ্জে। এ দৃশ্য উপজেলা জুড়ে।
জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ পানি নিঃষ্কাষনের ভালো ব্যবস্থা না থাকা। এমনিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈকতিক স্বচ্ছতার ফলে ধানি জমি, পুকুর, জলাশয় ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানির ধারণ ক্ষমতা দিনকে দিন সংকোচিত হয়ে আসছে। খালগুলোতে নিয়মিত মাটি না কাটাতে পলি জমে জমে খালের গভীরতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া খালের দুই পাড় কখনোই পরিষ্কার করা হয়না। ফলে দুই পাড়ে তৃণ লতা এবং গাছ গজিয়ে উঠে পানির প্রবাহ ক্ষমতাকে নষ্ট করছে। যেখানে নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত সে বাঁধ কেটে দিতে হবে। কচুরিফনা অপসারনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁধ সৃষ্টি করে মাছ চাষ করা যাবে না। প্রয়োজনে উপজেলার সামাজিক সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বর্তমানে উপজেলায় অঞ্চল ভিত্তিক সামাজিক সংগঠনও রয়েছে। খাল পরিস্কার এবং খননের কর্মসূচি হাতে নিলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচানো যাবে উপজেলাকে।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৬ নভেম্বর ২০২৪