চাঁদপুর আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ১১৫ নং কক্ষে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে প্রতি মাসে প্রায় আড়াইশ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ৩ হাজার ভ্যাকসিন ও ১২ হাজার ইনজেকশনের সিরিজ প্রদান করেছে। এ ভ্যাকসিনের জন্য কাউকে কোন টাকা প্রদান করতে হয় না।
চাঁদপুরসহ পাশ্ববর্তী জেলার রোগীরা যে হারে এখানে এসে চিকিৎসা নিচ্ছে সে তুলনায় পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না পাওয়ায় কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। তবে গত মাসে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আসায় আগামী ১ বছরের চাহিদা মেটানো যাবে বলে জানান এ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ।
জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে হাসপাতালে এ কার্যক্রমটি চালু হয়। কার্যক্রমের শুরুতে নিরব ব্যাধি হিসেবে প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তা এখন আর নিরব হিসেবে কাজ করছে না। চাঁদপুরসহ পাশ্ববর্তী শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর থেকে জলাতঙ্ক আক্রান্ত রোগী সেবা নিতে আসছেন। মাসে অন্তত দু’থেকে আড়াইশ’ রোগী হাসপাতালে এসে চিকিসাসেবা নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর থেকে আসা নার্গিস বেগম জানায়, আমার বাড়িতে থাকা পোশা বিড়াল আমাকে আচড় দেয়। তাই আমি হাসপাতালে এসে ইনজেকশন দিয়েছি। আরও ৩টি ইনজেকশন দিতে হবে। কোন টাকা লাগে নাই।
এ ব্যাপারে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ইনচার্জ সাদেক আলী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে ৩ হাজার ভ্যাকসিন এবং ১২ হাজার ইনজেকশনের সিরিজ প্রদান করা হয়েছে। একটি ভ্যাকসিন ৪ জনকে দিয়ে থাকি। সেই অনুযায়ী ৩ হাজার ভ্যাকসিন কে ১২ হাজার বার দেওয়া যাবে। যা আগামি ১ বছরের জন্য পর্যাপ্ত। গত ১ মাসে এই কেন্দ্রে ১শ ৫৩ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে কুকুরে কামড় ৮৮ জন, বিড়াল ও অন্যান্য প্রাণী ৬৫ জন।
করেনার প্রভাবে কারণে গতমাসে ভ্যাকসিন কম প্রদান করা হয়। তবে আমাদের রেবিস হিমোগ্লোবিন (আরআইজি) অতি প্রয়োজন। আগে রোগী অনুযায়ী ভ্যাকসিনের সংকট ছিল, তবে এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে পর্যাপ্ত দেয়া হয়েছে।
যেসব প্রাণীদের কামড় বা আচড়ে এ সংক্রমণটি হয়ে থাকে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কুকুর, বানর, শিয়াল, বিড়াল ও ভেজি কামড় বা আচড় দিলে ভেবিস ভ্যাকসিন অথবা রাবি-৪ দেয়া হয়। আগে এসকল প্রাণীরা কামড় বা আচড় দিলে মানুষের নাভিতে ১৪ টি ইনজেকশন দেয়া হতো। ইনজেকশনের ভয়ে একসময় এ রোগটি নিরব ব্যাধি হিসেবে প্রচলিত হয়েছিলো। বর্তমানে এক মাসের মধ্যে ৪টি ইনজেকশনের মাধ্যমে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এ প্রাণীগুলো কামড় বা আচড় দেয়ার পর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা গ্রহণ করাই ভালো। যদি কোনো আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করেন, তাহলে তিনি জলাতংক রোগে মৃত্যুবরণও করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি রোগীকে ২৮ দিনের মধ্যে ৪টি ইনজেকশন নিতে হয়। এর মধ্যে প্রানীর কামড়ের ১ম, ৩য়, ৭ম ও ২৮ তম দিন টিকাগুলো নিতে হয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাথে সাথে কাপড় কাচার সাবান দিয়ে ক্ষতস্থানের চারদিক লাগালে সাবারে ক্ষারের কারণে জলাতঙ্ক ভাইরাসটা নষ্ট হয়ে যায় বলেও তিনি জানান।
সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট, ১০ জুন ২০২১