প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলায় জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশেষ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে জলবায়ু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই গতকাল তিনি এ আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সপ্তাহব্যাপি অধিবেশনের আগে বিশ্ব নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্যারিস চুক্তির কঠোরভাবে বাস্তবায়নে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস নিউইয়র্কে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করেন।
শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেন,বিশ্বব্যাপি গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনে সামান্য অবদান রাখা সত্ত্বেও বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য দেশ এর ভয়ংকর শিকারে পরিণত হয়েছে। তিনি পৃথিবীকে রক্ষায় বর্ধিত তহবিল নিয়ে জলবায়ুজনিত সমস্যা সমাধানের জন্যে নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে জনসনও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দূরে রাখার সমর্থনে আরও অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। বিশেষ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কথা তুলে ধরে বলেন,’এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেলে তা তহবিলের পুরো চেহারাই পাল্টে দেবে।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উদ্বেগের কথা স্বীকার করে বলেন,’জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ও অনুন্নত দেশ যারা সংকট মোকাবিলা করছে তাদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্র তার ন্যায্য অংশ প্রদান করবে কিনা,এ বিষয়ে বাইডেনের কাছ থেকে শোনার জন্যে বিশ্বকে অপেক্ষা করতে হবে।’
বৈঠক শেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,’আমরা আমাদের বন্ধু সুইডেন,ডেনমার্ক, ইতালি এবং ইইউর অন্যান্যদের কাছ থেকে কিছু অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন,’আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি ও ইতিবাচক কথা শুনেছি। দেখা যাক আমরা কোথায় গিয়ে পৌঁছাই।’
জলবায়ু ইস্যুতে ডাকা বিশ্ব নেতাদের এ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বাইডেন যোগ দেননি। তবে তার জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি অংশ নিয়েছেন।
আশা করা হচ্ছে,মার্কিন প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার সাধারণ অধিবেশনে তার ভাষণ দেবেন।
এর আগে করা প্যারিস চুক্তিতে উন্নত দেশের নেতৃবৃন্দ ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল।
কিন্তু এ লক্ষ্য ব্যর্থ হয়। কারণ, ট্রাম্প সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অর্থই না দেয়ায় দেশটি সমালোচনার মুখে পড়ে।
চলতি সপ্তাহের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মূলত জলবায়ু সংকট ইস্যু ব্যাপকভাবে গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি,কোভিড-১৯ এবং আফগানিস্তানের ভবিষ্যতও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে জাতিসংঘ বলেছে, সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশন জলবায়ু এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলার ইস্যু মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে।
সপ্তাহের কর্মসূচির সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে,আমরা যা সিদ্ধান্ত নেব তা হয় আগামী প্রজন্মের পরিবেশগত স্বাস্থ্য,অর্থনীতিকে নিশ্চিত করবে,না হয় পুরনো কাঠামোকেই জোরদার করবে, যা প্রকৃতি ধ্বংস করছে ও সামাজিক বিভাজন তৈরি করছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রতি বছরই বহুল আলোচিত এ অধিবেশনের আয়োজন করে। কিন্তু, সংস্থাটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে গত বছর করোনা মহামারির কারণে প্রথমবারের মতো বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সশরীরে অধিবেশনে অংশ নিতে পারেনি।
চলতি বছরেও জাতিসংঘের নীতি-নির্ধারণী মূল এ অঙ্গের অধিবেশনে অনেকেই ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। সাধারণ পরিষদের ১৯৩ সদস্যের সকলেরই সমান ভোটাধিকার আছে।
বিশ্বের ১শ’রও বেশি নেতা জাতিসংঘের এ উচ্চপর্যায়ের বার্ষিক সমাবেশ এবং অধিবেশনের পাশাপাশি অন্যান্য বৈঠকে যোগ দিতে নিউইয়র্ক আসছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সংস্থার মহাসচিব নিয়োগ দেয়,নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যদের নির্বাচিত করে ।
সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের নিয়মিত অধিবেশনকালে সংস্থার বাজেট অনুমোদন করে। এ ছাড়াও প্রয়োজন হলে অধিবেশনের আয়োজন করে।
বার্তা কক্ষ , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১
এজি