খেলাধুলা

জমি বিক্রির টাকায় সাড়ে ৫ কি.মি. লম্বা পতাকা

আর মাত্র কিছুদিন পরেই শুরু হতে চলেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮। ইতোমধ্যে বিশ্ব ফুটবলের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। বাকি নেই বাংলাদেশও। কেউ কেউ নিজের পছন্দের দলের জন্য বাড়ির রং, বাড়ির নাম পরিবর্তন কিংবা গাড়ির রং ইত্যাদি পরিবর্তন করছেন। এবার এমন এক ভক্তর দেখা মিললো যেখানে এ কৃষক তার জমি ও ফসল বিক্রির টাকায় পাঁচ কি.মি. লম্বা পতাকা তৈরি করেছেন। মাগুরা সদরের ঘোড়ামারা গ্রামের আমজাদ হোসেন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে আরও আনন্দময় ও মনোমুগ্ধ করতে এই কাজ করেছেন। যদিও এটি তার এবারই প্রথম না। ২০১৪ বিশ্বকাপেও তিনি একই কাজ করেছিলেন।

ইতোমধ্যে মাগুরা জেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার পতাকাটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে। এ প্রসঙ্গে জার্মানি ফুটবল ভক্ত আমজাদ হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই আমি ফুটবল খেলার অন্ধভক্ত-দর্শক। বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই বিভিন্ন স্থানে টিভিতে খেলা দেখতে ছুটে যেতাম। জার্মানির খেলা আমার খুব পছন্দ হতো বিধায় আমি অনেক আগে থেকেই জার্মানিকে সমর্থন করি। কারণ তাদের খেলার ধরন ও কৌশল খুবই চমৎকার। আমি সামান্য একজন কৃষক। কৃষিকাজ করে আমি জীবিকা নির্বাহ করি। ফুটবলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর জার্মান খেলোয়াড়দের নৈপূণ্য ফুটবল ক্রীড়াশৈলী ভালোবাসি বিধায় আমি ২০১৪ সালে নিজের ৩০ শতক জমি বিক্রির টাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পতাকা তৈরি করেছিলাম। পতাকাটি জনসম্মুখে প্রদর্শন করায় তখন মাগুরা ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলাম। সেই সময় ঐ পতাকাটি তৈরি করতে আমার খরচ হয়েছিল ৫ লাখ টাকা।

আর ২০১৪ সালে যখন ব্রাজিলের মাঠে জার্মানি ফুটবল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো তখন আমি নিজেকে সার্থক মনে করলাম। জার্মানির এ চ্যাম্পিয়নে আনন্দে উল্লাসে নেচে গেয়ে আমরা জার্মান ভক্ত জেলার মানুষকে জানিয়েছিলাম। ২০১৪ সালে আমার এ পতাকা তৈরির খবরটি যখন মিডিয়ায় প্রকাশ হলো তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির হাই কমিশনার ড. ফারদাভান ওয়াসির নজরে পড়ল তখন তিনি আমাকে তলব করলেন ঢাকাতে। আমি ঢাকায় গিয়ে তার সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাকে সম্মাননা স্মারক, সার্টিফিকেট প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে জার্মান ফ্যানক্লাবের সদস্য হওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

এবারের আসন্ন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সম্পর্কে আমজাদ বলেন, এবারও আমি নিজের ফসল বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে জার্মানির পতাকাটি আরও ২ কিলোমিটার বৃদ্ধি করেছি। এখন পতাকাটির দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। ৫ জুন আমি মাগুরা সদর উপজেলার নিশ্চিতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পতাকাটি জনসম্মুখে উন্মুক্ত করবো। বাড়তি এ ২ কিলোমিটার পতাকা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ফুটবলে জার্মানির জেতার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

মাগুরার বিশিষ্ট ফুটবল ক্রীড়া সংগঠক বারিক আনজাম বারকি বলেন, একজন মানুষের ফুটবলের প্রতি যে এতো ভালোবাসা তার প্রমাণ আমজাদ ভাই। নিজের জমি ও ফসল বিক্রি করে তিনি যে পতাকা তৈরি করেছেন তা বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বার্তা কক্ষ

Share